নতুন গাড়ির বাজারে
‘ঘুরছে চাকা, এগোচ্ছে বিশ্ব’—যে চাকার ওপর ভর করে গাড়িগুলো ছুটছে নানা গন্তব্যে, সেই গাড়ির ধরন, আকার–আকৃতিও বিভিন্নভাবে বদলে গেছে। বছর শেষ হলেই আসে নতুন গাড়ি। গ্রাহকদের পছন্দও বদলে যায়। দেশের বাজারে ২০১৯–এর শেষে এবং চলতি বছরের শুরুতে বেশ কয়েকটি নতুন গাড়ি এসেছে। ডিজাইনে বৈচিত্র্য, চড়ার স্বাচ্ছন্দ্য এবং চেহারার পরিবর্তন করে এই গাড়িগুলো হতে পারে আপনার পরবর্তী পছন্দের গাড়ি।
টয়োটা র্যাভফোর হাইব্রিড
দুই হাত ভরা জিনিস নিয়ে গাড়ির ব্যাকডালা খোলা বেশ কষ্টের। হাতভর্তি জিনিস নিয়ে শুধু পা গাড়ির নিচে এগিয়ে দিলেই খুলে যাবে টেইলগেট। এবার জিনিসপত্র রেখে একটি সুইচ চেপেই আবার বন্ধ করা যাবে ব্যাকডালা। এমন সুবিধাসংবলিত র্যাভফোরের নতুন ভার্সন গ্রাহকদের মধ্যে বেশ সারা ফেলেছিল। নাভানা লিমিটেড দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে ২ দশমিক ৫ লিটার ইঞ্জিনসমৃদ্ধ টয়োটা র্যাভফোর হাইব্রিড। স্পোর্টি ফ্রন্ট সিট, ডুয়েল জোন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, প্যানারোমিক মুনরুফ, নিরাপত্তার জন্য ৭টি এয়ারব্যাগসমৃদ্ধ গাড়িটি চারদিক থেকেই আকর্ষণীয় সাজে ডিজাইন করা হয়েছে। গাড়িটির টার্নিং রেডিয়াস ৫ দশমিক ৫ মিটার হওয়ায় সহজেই গাড়িটি ঘোরানো যায়। নাভানা লিমিটেড র্যাভফোর গাড়ির হাইব্রিড ব্যাটারিতে ৪ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। এ ছাড়া গাড়িটিতে ৪ বছর বা ৫০ হাজার কিলোমিটার (যেটা আগে আসে) পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যাবে। গাড়িটির মূল্য ৮৮ লাখ টাকা।
মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার পিএইচইভি
২০২০ সালের শুরুতে প্লাগ ইন হাইব্রিড ক্যাটাগরিতে ২৩৬০ সিসিরি মিতসুবিশির নতুন একটি গাড়ি এনেছে র্যাংগস মোটরস লিমিটেড। গাড়িটির মডেল মিতসুবিশি আউটল্যান্ডা পিএইচইভি। গাড়িটি বৈদ্যুতিক এবং জ্বালানি দুটি মাধ্যমেই চালানো যায়। শুধু বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে গাড়িটি ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে সক্ষম। ফোর হুইল ড্রাইভসমৃদ্ধ গাড়িটিতে দুটি মোটর এবং বৃহৎ পরিসরে ১৩ দশমিক ৮ কিলোওয়াটের একটি হাইব্রিড ব্যাটারি রয়েছে। এলইডি ফগল্যাম্প, ইলেকট্রিক সানরুফ, রুফ রেইলস, রিয়ার ভেন্ট এসি, ইলেকট্রনিক টেইল গেটসমৃদ্ধ গাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৭০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলতে পারে। গাড়িটির মূল্য ৬৫ লাখ টাকা।
বিএমডব্লিউ এক্স ফাইভ পিএইচইভি
বিলাসবহুল গাড়ির সারিতে যে গাড়িগুলোর নাম প্রথমেই মনে আসে তাদের মধ্যে বিএমডব্লিউ অন্যতম। জার্মানির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউ এক্স ফাইভ হাইব্রিড গাড়িটি ২০২০ সালে দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গাড়িটির বাম্পার টু বাম্পার (সম্পূর্ণ গাড়ি) যন্ত্রাংশ, সার্ভিস এবং রক্ষণাবেক্ষণের ওপর ৫ বছর বা ৬০ হাজার কিলোমিটার (যেটা আগে আসে) বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করছে। গাড়ি কিনে পাঁচ বছর থাকুন নিশ্চিন্তে। ২৯৯৮ সিসির এই গাড়ি ৩৯৪ হর্সপাওয়ার (এইচপি) শক্তি যৌথভাবে উৎপাদন করে ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে গাড়িটি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তুলতে সক্ষম। একবার পরিপূর্ণ চার্জে গাড়িটি জ্বালানিবিহীন ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। ০-১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তুলতে গাড়িটির মাত্র ৫ দশমিক ৬ সেকেন্ড প্রয়োজন।
বিএমডব্লিউ এক্স ৫ পিএইচইভি বাইরে যেমন সুদর্শন ভেতরটাও তেমনি রাঙা। এক্স ড্রাইভ (ফোর হুইল ড্রাইভ), চামড়ায় মোড়ানো ইন্টেরিয়র, সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পেতে রোলার সানব্লাইন্ড, সফট ক্লোস ডোর ফাংশন, এয়ার সাসপেনশন, বিএমডব্লিউ লেজার লাইট, ৩৬০ ডিগ্রি পার্কিং অ্যাসিস্ট ক্যামেরা, ১২ দশমিক ৩ ইঞ্চি মাল্টিমিডিয়া ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, চার জোনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এবং বিএমডব্লিউ ডিসপ্লে কি রয়েছে। গাড়ির এক্সটেরিয়র ডিজাইনে এক্স লাইন এবং এম স্পোর্টস প্যাকেজ নামে দুটি অপশন রয়েছে। ১১টি রঙে গাড়িটি দেশের বাজারে মিলবে। বিএমডব্লিউ এক্সফাইভ পিএইচইভির মূল্য ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা থেকে শুরু।
পুঁজো ৩০০৮
জাপানি গাড়ির রাজত্বে ক্রেতার যদি আকর্ষণ থাকে অন্য দেশের গাড়ির প্রতি, তাহলে ফ্রান্সের তৈরি পুঁজো হতে পারে নান্দনিক ডিজাইনের অন্যতম পছন্দ। দেশের বাজারে পুঁজো গাড়ি আমদানি করছে এজি মোটরস। গত বছরের নভেম্বরে তারা নিয়ে আসে পুঁজো ৩০০৮। ১৬০০ সিসির এ গাড়িটি হ্যারিকেন গ্রে, লাল ও কালো রঙে পাওয়া যাচ্ছে। পুঁজো ৩০০৮ ১ দশমিক ৬ টিএইচপি টার্বোচার্জড ইঞ্জিনসমৃদ্ধ। স্বয়ংক্রিয় ৬ গিয়ারসমৃদ্ধ গাড়িটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০৬ কিলোমিটার গতির ঝড় তুলতে সক্ষম। পুঁজো ৩০০৮ মাত্র ৮ দশমিক ৯ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে। পুরোপুরি চামড়ায় মোড়ানো পাঁচ আসনবিশিষ্ট এ গাড়িটিতে ৫৯১ লিটার বুট স্পেস রয়েছে। প্যানারোমিক সানরুফ, ওয়্যারলেস চার্জার, স্পোর্টস মুডসমৃদ্ধ গাড়িটি দুটি ক্যাটাগরিতে পাওয়া যায়। মিড অব দ্য লাইন ক্যাটাগরিতে গাড়িটির মূল্য ৬১ লাখ টাকা এবং টপ অব দ্য লাইনে ৬৬ লাখ টাকা।
সুজুকি আল্টো এবং ওয়াগন আর
সাধ্যের মধ্যে বা প্রয়োজন মেটাতে যে গাড়িগুলো সহজেই কেনা যায়, তার মধ্যে সুজুকি আল্টো এলএক্সআই অন্যতম। ৮০০ সিসির এ গাড়ির মূল্য ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তিন সিলিন্ডারের চার ভালভবিশিষ্ট এ গাড়িটি ম্যানুয়েল গিয়ারসমৃদ্ধ। ৪ দশমিক ৬ মিটার টার্নিং রেডিয়াস থাকার কারণে সহজেই গাড়িটিকে ঘোরানো যায়। পাঁচ আসনবিশিষ্ট ৩৫ লিটার জ্বালানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুজুকি আল্টোর মাইলেজও আকর্ষণীয়। প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে গাড়িটি শহরে ১৭ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ২১ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম।
২০২০ সালে ১ দশমিক ২ লিটারসমৃদ্ধ সুজুকির আরেকটি গাড়ি দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে উত্তরা মোটরস। গাড়িটির মডেল ওয়াগন আর। নতুন ডিজাইন, ফগ ল্যাম্পস, রিমোট কিলেস এন্ট্রি, স্টিয়ারিং এ কল এবং অডিও নিয়ন্ত্রণ, টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট, অটো গিয়ার শিফট, রিয়ার পার্কিং সেন্সর, স্পিড সেনসিটিভ অটো ডোর লকসমৃদ্ধ গাড়িটি হ্যাচবেক ঘরানার। গাড়িটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬৫ মিলিমিটার হওয়ায় যেকোনো গতিরোধক এবং বন্ধুর রাস্তায় গাড়ির চেসিসে আঘাত না এনেই চলতে পারে। চার সিলিন্ডারের ১৬ ভালভবিশিষ্ট গাড়িটির মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
প্রোটন সাগা
মালয়েশিয়ার অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রোটনের গাড়ি দেশে উৎপাদন করছে পিএইচপি অটোমোবাইল লিমিটেড। ২০১৯ মডেলের ২০২০ সালে উৎপাদিত এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি গাড়িটির নাম প্রোটন সাগা। ১৩৩২ সিসির মিড সেডান ধরনের এ গাড়িটি ক্রেতাদের পছন্দ অনুসারে যেকোনো রঙে পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও লিংক রোডে প্রোটনের নতুন প্রদর্শনী কেন্দ্র যাত্রা শুরু করেছে। প্রোটন সাগাতে পাঁচ বছর ব্যবহারের পর গাড়ির অবস্থা অনুসারে বুক ভ্যালুর সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ বাই ব্যাক অফারে নতুন গাড়ি কেনার অফারও মিলছে। ইকো ড্রাইভ অ্যাসিস্ট, অলরাউন্ড সেন্সরস, পেছনের যাত্রীদের মোবাইল চার্জের জন্য দুটি ইউএসবি পোর্ট, ৪২০ লিটার বুট স্পেস, হিল হোল্ড এবং ব্রেক অ্যাসিস্ট সুবিধাসহ গাড়িটির মূল্য ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা। প্রোটন সাগাতে ৩ বছর বা ৩০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবা মিলবে। থাকছে পাঁচটি ফ্রি সার্ভিসিং।
এ ছাড়া প্রোটন প্রিভি স্পোর্টস কার পাওয়া যাচ্ছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা প্রোটন পারসোনার মূল্য ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।