করোনার কোপে সৈয়দপুরে কারখানা বন্ধের উপক্রম

সৈয়দপুর শহরের নিয়ামতপুরে অবস্থিত ননস্টিক তৈজসপত্র ও প্রেশারকুকার তৈরির কারখানা রয়েলেক্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রি প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে কারখানাটির তিনটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বাধ্য হয়ে ওই কারখানার মালিক ইলেকট্রিক সামগ্রী, গ্যাসের চুলা, ব্লেন্ডার মেশিন, প্রেশারকুকার, ননস্টিক তৈজসপত্র উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন।
নোয়াহ গ্রুপের ওই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজকুমার পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের যে কাঁচামাল তা চীন থেকে আমদানি হয়ে থাকে। আমদানি করা ওই সব কাঁচামালের স্টক ফুরিয়ে যেতে বসেছে। নতুন করে আমদানিও বন্ধ রয়েছে। ফলে কারখানাটির ১৮টি ইউনিটের ৩টি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে।’
রাজকুমার বলেন, সৈয়দপুরের আরও চারটি তৈজসপত্র কারখানা কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ওই খাতে ৪ হাজার কর্মচারী বেকার হতে বসেছেন।
চীনের করোনাভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে নীলফামারীর শিল্প-বাণিজ্য শহর সৈয়দপুরে। নতুন করে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাধিক কলকারখানা। শ্রমিক ছাঁটাইও অব্যাহত রয়েছে।
তৈজসপত্র ছাড়াও সৈয়দপুরের দুটি প্লাইউড কারখানাও কাঁচামালের সংকটে পড়েছে। এসব কারখানার কাঁচামালও চীন থেকে আমদানি-নির্ভর।
সৈয়দপুর বাইপাস সড়কের আহমেদ প্লাইউড কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ বলেন, কাঁচামালের অভাবে যেকোনো সময় আমাদের কারখানাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘করোনাভাইরাস কবে স্বাভাবিক হবে জানি না।’
এ নিয়ে কথা হয় নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মারুফ জামান কোয়েলের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধু সৈয়দপুরের কারখানাগুলো নয়, করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে উত্তরা ইপিজেডেও। এখানকার অনেক কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত রেখেছে, যার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর শঙ্কায় আছেন সৈয়দপুরের ইকু পেপার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিদ্দিকুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের উদ্বেগে ফেলেছে । পেপার তৈরির মূল উপকরণ অয়্যার ও সেল্ড নামের কাঁচামাল আমরা চীন থেকে আমদানি করে থাকি । এ ছাড়া সব ধরনের দৈনন্দিন যন্ত্রাংশ সে দেশ থেকেই আমদানি করতে হয় । আমরা বড়জোর তিন মাস মিল চালু রাখতে পারব । তারপর ভয়াবহ সংকটে পড়তে হবে । ফলে বন্ধ হয়ে যাবে উৎপাদন ।
এ ছাড়া সৈয়দপুরে চীনের পরচুলা কারখানায় কাঁচামালের সংকট চলছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেছে ।
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক মোরশেদুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা চীন থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এখন ঋণপত্র (এলসি) খোলা বন্ধ রেখেছেন । এতে করে অচিরেই ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকট দেখা দেবে, উৎপাদন হ্রাস পাবে মিল-কারখানায় ।