২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ব্যথা উপশমে রুমকীর সাফল্য

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সামনের দিনগুলোতে যেসব পেশার প্রাবল্য বাড়বে বলে মনে করে, তার সিংহভাগজুড়েই রয়েছে কেয়ার গিভিং বা মানবসেবা। কারণটা সহজ। এই কাজগুলো মানুষের মতো মমতা নিয়ে কোনো রোবট আগামী ৩০ বছরে করতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে যানজটের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় যানবাহনে বসে থাকা, খেলার মাঠ না থাকায় খেলাধুলার অভাব আর হাঁটার রাস্তা না থাকায় সকালে বা বিকেলে হাঁটতে না পারা—শহরগুলোতে মানুষের শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে কমিয়ে দিয়েছে। এসব কারণে মানুষের শারীরিক ব্যথায় ভোগার পরিমাণও বেড়ে গেছে অনেক।

উত্তরায় ৪ নম্বর সেক্টরে নিজের প্রতিষ্ঠান পিটিআরসি–তে (ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে) কথা হচ্ছিল উম্মে শায়লা রুমকীর সঙ্গে। শারীরিক ব্যথা উপশম ও শারীরিক ব্যথা জয়কে মূলধারায় আনার জন্যই নিরন্তর তাঁর প্রচেষ্টা। তবে এসব নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে যুক্ত থাকা বা কোনো প্রতিষ্ঠানে চেম্বার খুললেই তো পারতেন, নিজেই কেন উদ্যোক্তা হলেন?

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ থেকে ফিজিওথেরাপি বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০৮ সালে ঢাকার একটি হাসপাতালে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম তো’—জানালেন উম্মে শায়লা রুমকী। ‘কিন্তু চাকরি না করে চাকরি সৃষ্টি করার ইচ্ছা ছিল। তাই চাচার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে ২০০৯ সালে শ্যামলীতে নিজের বাসার একটা রুমে পিটিআরসি শুরু করি।’

এ সময় আরও একটি ঘটনা ঘটে। ছোটবেলা থেকে রুমকী নিজেই নিজের জামাকাপড় ডিজাইন করতেন। অনেকেই সেগুলো নিয়ে আগ্রহও দেখাতেন। কাজে পিটিআরসির পাশাপাশি ‘ট্রেন্ডি টেক্স’ নামে একটি ফ্যাশন হাউসও শুরু করেন তিনি। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন ফিজিওথেরাপিই তাঁর কাজের ক্ষেত্র। কাজেই বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন্ডি টেক্স।

এ সময় মা হতে গিয়ে কাজে সময় কম দিতে পারা আর শ্যামলীর বাড়িওয়ালার একলাফে বাড়িভাড়া ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে বন্ধ করে দিতে হয় পিটিআরসিও। বোনের কাছাকাছি থাকবেন বলে চলে আসেন উত্তরায়। পিটিআরসির পুরোনো মেশিন এবং বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বাসার ড্রয়িংরুমে দুজন কর্মী নিয়ে আবার শুরু ২০১৩ সালে। কিছুদিন পরে ৫০০ বর্গফুট হয়ে ৩ হাজার বর্গফুটের স্থানে স্থানান্তরিত হয় পিটিআরসি। কর্মীর সংখ্যা বেড়ে হয় ২৩। ২০১৮ সালে মিরপুরে দ্বিতীয় শাখাও চালু করেন। তবে যাতায়াত জটিলতায় সম্প্রতি মিরপুর শাখাটি স্থগিত করে দিয়েছেন। ‘ঢাকার যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য এলে আবারও বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ার ইচ্ছে।’

বর্তমানে রুমকীর প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ফিজিওথেরাপি, বয়স্ক সেবা বা এলডারলি কেয়ার, হোম কেয়ার, ফিটনেস প্রোগ্রাম, বাচ্চাদের জন্য স্পিচ থেরাপি, কাউন্সেলিং, এডুকেশন থেরাপি, স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম, গর্ভকালীন ফিজিওথেরাপি, প্রশিক্ষণ ও অনলাইন সেবা।

পিটিআরসির বিশেষত্ব হচ্ছে এর হোম সার্ভিস। রুমকী গড়ে তুলেছেন প্রায় শত ফিজিওথেরাপিস্টদের একটি নেটওয়ার্ক, যারা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন ঢাকা শহরজুড়ে। ‘এতে সুবিধা হলো আমাদের ক্লায়েন্টদের সব সময় পিটিআরসিতে আসতে হয় না। স্থানীয় ফিজিও প্রয়োজনে রোগীর বাসায় গিয়ে সেবা দিতে পারেন।’

তবে শুধু চিকিৎসা করতে রাজি নন এই উদ্যোক্তা। জনগণকে ফিজিওথেরাপিসহ, ব্যায়াম এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত বিভিন্ন টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেসবুক লাইভ প্রোগ্রাম, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নিয়মিত লেখালিখি করছেন। সুস্থতায় ব্যায়াম নামে ২০১৯ সালে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কে ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ প্ল্যাটফর্ম ২০১৬ সালে তাঁকে তরুণ উদ্যোক্তা সম্মাননা দেয়। ২০১৭ সালে সিটি ফাউন্ডেশনের সিটি মাইক্রো উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশ ইয়ুথ এন্ট্রাপ্রেনিউর হেল্প সেন্টার থেকে পরপর দুবার সেরা তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন। তা ছাড়া ২০১৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দেশকে তুলে ধরেছেন।

গর্ভকালীন সময়টা এই দেশের মেয়েরা খুব একটা উপভোগ করেন না। কিন্তু সুস্থ থাকলে, দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত না হলে নারীজীবনের এই বিশেষ অধ্যায়টি হয়ে উঠতে পারে আনন্দময়, আর তাই এই নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করতে চান রুমকী।

স্বামী রকিবুল ইসলাম আর ছেলে সোয়াদ ইসলাম আয়ানকে নিয়ে উত্তরায় থাকেন রুমকী। পিটিআরসিকে গড়ে তুলতে চান একটি পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সে জন্যই কাজ করে চলেছেন নিরন্তর।