কিছু ট্যানারি মালিক কমপ্লায়েন্ট কারখানা করতে গড়িমসি করছে: শিল্পমন্ত্রী

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আজ সোমবার এক কর্মশালায় বক্তব্য দেন। রাজধানীর ইআরএফ কার্যালয় মিলনায়তনে। ছবি: শুভংকর কর্মকার
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আজ সোমবার এক কর্মশালায় বক্তব্য দেন। রাজধানীর ইআরএফ কার্যালয় মিলনায়তনে। ছবি: শুভংকর কর্মকার

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় আমাদের চামড়াশিল্পের রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ছে না। সনদ প্রাপ্তির জন্য সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা দরকার। সেটির জন্য সম্প্রতি একটি কোম্পানিও গঠন করা হয়েছে। চামড়াশিল্পের উন্নয়নে সরকার সব ধরনের নীতি সহায়তা দিচ্ছে। ক্ষতিপূরণের অর্থও ট্যানারি মালিকদের দেওয়া হয়েছে। তারপরও কিছু ট্যানারি মালিক কমপ্লায়েন্ট (উন্নত কর্মপরিবেশ) কারখানা গড়তে গড়িমসি করছেন।’


শিল্প মন্ত্রণালয় ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) যৌথ আয়োজনে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা–২০১৯ অবহিতকরণ বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ সোমবার এসব কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ের মিলনায়তনে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চামড়াশিল্পে কোনো অনিয়ম ও বিচ্যুতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, এলডব্লিউজি সনদের জন্য ইতিমধ্যে মক অডিট (পরীক্ষামূলক নিরীক্ষা) সম্পন্ন হয়েছে। সে অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেগুলো করা করা হচ্ছে।

চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ট্যানারি মালিকদের পানির অপচয় বন্ধ করার আহ্বান জানান শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণে বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে। সব বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব না। পানি ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, চলতি বছর চামড়াশিল্প নগরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পরিবেশ দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১২৩টি ট্যানারি চালু হয়েছে। সাত হাজার কোটি থেকে আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ট্যানারি মালিকেরা। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিষয়টি অচিরেই সমাধান করতে হবে।

ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিল্প সচিব আবদুল হালিম, ইআরএফ সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল।

অস্তান লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইবনুল ওয়ারা বলেন, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে সিইটিপি পুরোদমে চালু হওয়ার কথা। সেটি না হলে যে সব কারখানা নিজেদের উদ্যোগে ইটিপি করতে চায় তাদের অনুমতি দেওয়া দরকার। না হলে বাংলাদেশের চামড়া খাত বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আগামী বছর এলডব্লিউজি সনদের নতুন সংস্করণ চালু হবে। তখন সনদ পেতে বর্তমানের চেয়েও কঠিন মান অনুসরণ করতে হবে।

কর্মশালার দ্বিতীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি প্রায় একই ছিল, ১৫ কোটি ডলার। বর্তমানে ভিয়েতনামের চামড়াশিল্পের রপ্তানি ২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ১০০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে ট্যানারির সফল স্থানান্তর হয়নি। সিইটির দৃশ্যমান অগ্রগতি দরকার। কারণ কমপ্লায়েন্স না মানলে চামড়ার ব্যবসা করা যাবে না।