মানুষের কাছাকাছি আইপিডিসি ফিন্যান্স
অনেকেই নিজের একটি ঠিকানা করতে চান। কেউ চান আবার একটি গাড়ি কিনতে। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এগুলো যেন অধরা স্বপ্ন। কিন্তু তাদের এমন স্বপ্নের সঙ্গী আইপিডিসি ফিন্যান্স।
আর্থিক সেবাদাতা এই প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষকে নিজের বাড়ি, গাড়ি, নতুন ব্যবসা, বড় সঞ্চয় অর্জন করতে সাহায্য করছে।
শুরুটা ১৯৮১ সালে। যুদ্ধপরবর্তী দেশ। বেসরকারি খাত গড়ে তোলা প্রয়োজন। এগিয়ে এল চারটি দেশের প্রতিষ্ঠান। তাদের শেয়ারে তৈরি হলো আইপিডিসি অ্যাক্রোনিম নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), জার্মানির জার্মান ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ডিইজি), সুইজারল্যান্ডের দ্য আগা খান ফান্ড ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (একেএফইডি), যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (সিডিসি)।
বেসরকারি খাতে অনেক বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (আইপিডিসি) হাত ধরে। এর মধ্যে আছে লিজিং কোম্পানি আইডিএলসি, পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিন, অ্যাপোলো হাসপাতাল ঢাকা, স্কলাস্টিকা স্কুল, সামিট পাওয়ার, ফ্যান্টাসি কিংডম থিম পার্ক।
মাঝে এই অগ্রগতির ধারা কিছুটা থমকে ছিল। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬—এই আট বছর। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। হেড অব অপারেশনস হিসেবে মমিনুল ইসলাম যোগ দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিকে গুছিয়ে তোলার কাজটি শুরু হয়। সাফল্যও আসতে শুরু করে।
২০১৫ সালে আরও এক ধাপ এগোতে চাইল প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। সারা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইল আইপিডিসি। এ সময় আগা খান ফান্ড তাদের ৪০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ও তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন ও আরএসএ ক্যাপিটালের কাছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোম্পানিটির অন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি নাগরিক। আছে সাধারণ জনগণেরও কিছু শেয়ার। আইপিডিসি অ্যাক্রোনিম থেকে আত্মপ্রকাশ করে আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেড।
এ সময় আইপিডির ব্র্যান্ডকে নতুন করে সামনে আনা হয়। এত দিন করপোরেট ব্র্যান্ড হিসেবে এটি পরিচিত ছিল। রি-ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি যাওয়া। আইপিডিসি মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে থাকতে চায়। নতুন লোগো তৈরি হয়। ট্যাগলাইন ঠিক হয় ‘জাগো উচ্ছ্বাসে’। নতুন ব্র্যান্ডের রং হলো ম্যাজেন্টা।
প্রতিষ্ঠানটির হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড করপোরেট কমিউনিকেশন মাহজাবীন ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, সে সময় আইপিডিসি পাঁচ বছরের লক্ষ্য ঠিক করে। আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা কাজ করতে পারে, তা চিহ্নিত করা হয়। আইপিডিসি ঠিক করে, তাদের যেকোনো কাজে লাভের চেয়ে গুরুত্ব পাবে তিনটি জিনিস—কাজটি টেকসই কি না, অর্থবহ কি না আর কোনো প্রভাব তৈরি করছে কি না।
আইপিডিসি নজর দেওয়া শুরু করে পাঁচটি দিকে। ঢাকা, চট্টগ্রামের বাইরে এই প্রথম দেওয়া শুরু হলো গৃহঋণ। মাহজাবীন ফেরদৌস বলেন, ‘এই শহর দুটির বাইরে তখন কোনো আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গৃহঋণ দিত না। অথচ সারা দেশেই এর চাহিদা অনেক। নিজের একটি ঠিকানা তৈরি হোক—এটা সবাই চান। আইপিডিসি ফিন্যান্স মানুষের এই স্বপ্নের সঙ্গে থাকতে চায়।’
পরের ক্ষেত্রটি হলো নারীর ক্ষমতায়ন। আইপিডিসি মনে করে, এটি তখনই সম্ভব যখন নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন। এ জন্য নারীদের ঋণ দেওয়া হয়। অর্জিত সম্পদ যেন নারীর নিজের নামে হয়, সে দিকটিও দেখে আইপিডিসি।
তৃতীয় ক্ষেত্রটি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য। যারা ব্যবসা করতে চান, ব্যবসা বড় করতে চান তাদের ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়। চতুর্থ ক্ষেত্রে ঘরের ছোট ছোট প্রয়োজন মেটাতে ঋণ দেওয়া হয়, যেমন ফ্রিজ, টিভি ইত্যাদি। পঞ্চম ক্ষেত্রটি হলো সাপ্লাই চেনের।
এই ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করে আইপিডিসি ৫০০ কোটি টাকার কোম্পানি থেকে এখন প্রায় ৪৫০০ কোটি টাকার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
আইপিডিসির উদ্দেশ্য, সাধারণ মানুষকে তার জীবনের পরবর্তী ধাপে পৌঁছে দেওয়া। তার চলার পথের পাথেয় হওয়া। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।