৪১তম বিসিএসের নন–ক্যাডারের পদ চূড়ান্ত শিগগিরই
৪১তম বিসিএসের নন–ক্যাডারের অপেক্ষমাণ তালিকা হতে কতজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এটি নিশ্চিত করার জন্য চিঠি দিলেও তা সম্পূর্ণ চূড়ান্ত করতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটি নিশ্চিত করা হবে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা ১ হাজার ৫০০ পদের তালিকা চূড়ান্ত করেছি। এগুলো শিগগিরই চূড়ান্ত করে পিএসসিতে পাঠানো হবে।’
এদিকে পিএসসি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, গত মাসের ১০ তারিখের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ৪১তম বিসিএসের নন–ক্যাডার থেকে কোন পদে কতজনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে, তা চূড়ান্ত করার অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তা করতে পারেনি। পরে মন্ত্রণালয় মৌখিকভাবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। তবে আজ বুধবার পর্যন্ত পিএসসি কোনো তালিকা পায়নি বলে নিশ্চিত করেছে পিএসসির একাধিক সূত্র।
জানতে চাইলে পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪১তম বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে কতজনকে নিয়োগের সুপারিশ করা যাবে, তা নির্ধারণ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি। পদের তালিকা পেলে আমরা প্রার্থীদের সময় দিয়ে পদ বাছাই করার সুযোগ দেব। এরপর তাঁদের পছন্দের পদ ও তাঁদের যোগ্যতা হিসেবে তাঁরা যে পদ পান, তা নির্ধারণ করব। সবাই নিয়োগ পাবেন না। যোগ্যতা অনুসারে যিনি পদ পাবেন, তাঁর নাম প্রকাশ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, সরকার তথা জনপ্রশাসন নিয়োগ দেয়। পিএসসি তা বাস্তবায়ন করে। চাকরিপ্রার্থীরা মনে করেন, পিএসসি চাইলেই নিয়োগ দিতে পারে। এটা সঠিক নয়। জনপ্রশাসন যত পদে নিয়োগ দিতে বলবে, পিএসসি তা-ই করবে।
এদিকে ৪১তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের তালিকায় থাকা প্রার্থীরা এ বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে সর্বোচ্চ নিয়োগের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে আবেদন করেন চার লাখের বেশি প্রার্থী। কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ দেশ লকডাউনে চলে যাওয়ায় ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ২০২১ সালের ১ আগস্ট ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ২১ হাজার ৫৬ প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা।
২০২২ সালের ১০ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, উত্তীর্ণ হন ১৩ হাজার প্রার্থী। এসব প্রার্থী ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে পরের বছর ২৬ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দীর্ঘ ৩ বছর ৯ মাস পর গত ৩ আগস্ট ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়, যা অতীতের যেকোনো বিসিএস পরীক্ষার বিচারে দীর্ঘতম সময়।
এ ফলে ক্যাডার হিসেবে ২ হাজার ৫২০ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেও সাধারণ ক্যাডারের শূন্য পদের সংখ্যা কম হওয়ায় মোট ৯ হাজার ৮২১ প্রার্থীকে নন-ক্যাডার পদে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯-এ ৪১তম বিসিএসের প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অধিকাংশেরই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়েছে। এ দীর্ঘসূত্রতার পরও বিসিএসের সব ধাপে উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮২১ জন নন-ক্যাডার প্রার্থী যদি একটি সম্মানজনক চাকরি না পান, তাহলে এর চেয়ে হতাশার আর কিছু থাকবে না।
৪১তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকাভুক্ত পদপ্রার্থীরা এ মর্মে দাবি জানান যে, ‘নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা, ২০২৩’-এর বিধান অনুযায়ী, সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক শূন্য পদে নিয়োগের অধিযাচনপত্র প্রাপ্তি এবং নন-ক্যাডার পদে মেধাক্রম ও বিদ্যমান বিধিবিধান অনুসরণ করে সুপারিশের লক্ষ্যে বিশেষভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে সবার যথাযোগ্য চাকরি লাভের ব্যবস্থা করা হোক।
পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের প্রতি অনুরোধ, যেকোনো বিসিএসে ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে যেন নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করা না হয়। তাহলে যেমন পদ নষ্ট হয়, তেমনই একজন চাকরিপ্রত্যাশী পদ বঞ্চিত হন। নন-ক্যাডারে সুপারিশের ক্ষেত্রে যথারীতি সরকারি চাকরিতে থাকা কোনো প্রার্থীকে যেন তাঁর বর্তমান গ্রেডের থেকে নিচের গ্রেডে সুপারিশ করা না হয়। কেননা, এ কারণে ওই প্রার্থী নিচের গ্রেডের পদে যোগদান করবেন না। অপর দিকে একজন চাকরিপ্রত্যাশী পদ বঞ্চিত হবেন। আমাদের এ যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
গত ৬ আগস্ট ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে পিএসসি। ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশিত হয়। ৪১তম বিসিএসে ২ হাজার ৫২০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। পেশাগত ১৬টি ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় কাউকে সুপারিশ করতে পারেনি পিএসসি। এ ছাড়া নন-ক্যাডারে ৯ হাজার ৮২১ প্রার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।