৪৩তম বিসিএসের চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়োগে দেরি কেন

৪৩তম বিসিএসের চাকরিপ্রার্থীদের সব ধরনের ভেরিফিকেশন শেষ হলেও তাঁদের যোগদান বিলম্বিত হচ্ছে। চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, তাঁদের অনেকে নতুন চাকরিতে যোগদানের আগে অন্য চাকরি ছাড়ার যে বাধ্যবাধকতা আছে তা মেনে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন বিপদে আছেন। একদিকে আর চাকরি নেই, আরেক দিকে ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগেও দেরি হচ্ছে। সব মিলে হতাশায় দিন পার করছেন তাঁরা। এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগের অগ্রগতি জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, শিগগিরই হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি নতুন সরকার আসার পর সবকিছু নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। জনপ্রশাসনে এখন নিয়মিত আগের পদোন্নতি, পদায়ন–সংক্রান্ত কাজগুলো নিয়ে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন করে ৪৩তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপনে সময় লাগছে। কবে হবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা দ্রুত করার চেষ্টা করছি।’

জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৪৩তম বিসিএসের কাজ হাতে নিয়েছি। ঠিক কত দিন পরে এর প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হবে বলতে পারছি না। তবে আমরা আন্তরিকভাবেই চাইছি দ্রুত হোক।

মাঠ প্রশাসন নিয়ে কাজ করেছেন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৪৩তম বিসিএসের চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়োগে দেরি কেন? এখন মাঠে নতুন কর্মকর্তা প্রয়োজন। এখন তো সময় কাজের। তাই দ্রুতই নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হোক। নতুন করে পরীক্ষার ঝামেলা নেই। তাঁরা তো যোগ দেওয়ার জন্য বসেই আছেন। আবার অনেকে পুরোনো চাকরিও ছেড়েছেন শুনেছি। সব মিলে দ্রুত নিয়োগ প্রদান করা হোক তাঁদের। নতুন করে ভেরিফিকেশনের কোনো দরকার নেই। আগের ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত একটা বৈষম্যের বিহিত করেছে এই সরকার। এ ধরনের ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের জন্য ৯ মাস আগে সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কিন্তু এখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় নিয়োগের আশায় বসে থেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা। দ্রুত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা।

আরও পড়ুন

সাধারণত পিএসসি থেকে নিয়োগের সুপারিশের তালিকা জনপ্রশাসনে পাঠানো হয়। এরপর এই তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থীদের নানা ধরনের তথ্য যাচাই করা হয়। সব তথ্য পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় তাঁদের নিয়োগের সুপারিশ করে।

২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে এবং ৬৪২ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরে। সেই হিসাবে সাড়ে তিন বছর পার হয়ে গেলেও চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি।

৪৩তম বিসিএসে ২ হাজার ১৬৩ জন ক্যাডার পদের মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষা ক্যাডারে ৮০৩ জন, প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫ জন, পুলিশ ক্যাডারে ১০০ জন, কর ক্যাডারে ১০১ জন, তথ্য ক্যাডারে ৪৩ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জনে ৭৫ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে।

২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর দেশের সব বিভাগীয় শহরে একযোগে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি প্রিলিমিনারির ফলাফল প্রকাশিত হয়, যাতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থী। ২০২২ সালের জুলাইয়ে পিএসসি লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে, এতে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮৪১ জন।

আরও পড়ুন

৪৩তম বিসিএসে সুপারিশ পাওয়া বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষোভ আর হতাশা দিন দিন বাড়ছে। চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন অনেকে। বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চাকরিতে যোগদান করা নিয়ে নানা ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিসিএসের প্রজ্ঞাপন প্রকাশে দেরি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নানা কথা হচ্ছে। অনেকে না জেনেই অনুমাননির্ভর তথ্য শেয়ার করছেন গেজেটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে, যা উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিভ্রান্তিতে ফেলছে। কেননা গেজেটের সম্ভাব্য সময়ের ওপর ভিত্তি করে অনেকের বর্তমান চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়টি জড়িত।

নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা বলছেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের নয় মাস হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের গেজেট এখনো হচ্ছে না, কবে হবে সেটাও আমরা জানি না। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছি। কবে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিতে পারব, কেউ কিছুই বলছে না।’

আরও পড়ুন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেজেট প্রকাশের পূর্বে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশের অনিশ্চয়তা প্রার্থীদের হতাশার অন্যতম কারণ। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় তাঁদের মানসিক চাপ আরও বেড়েছে। এমতাবস্থায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন প্রার্থীদের দ্রুত গেজেট প্রকাশ করে তাঁদের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করলে শুধু প্রার্থীদের হতাশা দূর হবে না, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমেও নতুন উদ্যম যোগ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪৩তম বিসিএসের কাজ হাতে নিয়েছি। ঠিক কত দিন পরে এর প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হবে বলতে পারছি না। তবে আমরা আন্তরিকভাবেই চাইছি দ্রুত হোক।’

আরও পড়ুন