৪৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় যেভাবে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার প্রস্তুতি নেবেন
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ও ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন। আজ প্রথম পর্বে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হলো।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা। এ বিষয়ে আপনি যেমন ৯৫ নম্বরের বেশি পেতে পারেন, তেমনি দুর্বল হলে ৩০ নম্বরের কমও পেতে পারেন। এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য পরীক্ষার্থীদের মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, বিজ্ঞান শাখা থেকে আসা পরীক্ষার্থী ও মানবিক/ব্যবসায় শিক্ষা থেকে আসা পরীক্ষার্থী।
গাণিতিক যুক্তি
পরীক্ষায় গাণিতিক যুক্তি বিষয়ে ২ ঘণ্টায় ৫০ নম্বরের উত্তর করতে হয়। প্রশ্ন হতে পারে ১৪ থেকে ২৪টি। ৩৫ থেকে ৪৫তম বিসিএসে যেসব অধ্যায় থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন এসেছে, সেগুলো হলো পাটিগণিতীয় সরলীকরণ, ঐকিক নিয়ম, গড়, শতকরা, সরল ও যৌগিক মুনাফা, লসাগু ও গসাগু, অনুপাত ও সমানুপাত, লাভ-ক্ষতি, বীজগাণিতিক সূত্রাবলি, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, একঘাত ও দ্বিঘাত সমীকরণ, সরল ও দ্বিঘাত অসমতা, দুই ও তিন চলকবিশিষ্ট রৈখিক সমীকরণ, সূচক, লগারিদম ও ফাংশন, সমান্তর ও গুণোত্তর অনুক্রম ও ধারা, সেটতত্ত্ব ও ভেনচিত্র, ফাংশন, বিন্যাস ও সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, দ্বিপদী বিস্তৃতি, রেখা, কোণ ও ত্রিভুজসংক্রান্ত উপপাদ্য, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, বৃত্ত ও চতুর্ভুজসংক্রান্ত উপপাদ্য, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতিক অনুপাত, ত্রিকোণমিতির সাহায্যে দূরত্ব ও উচ্চতা নির্ণয় এবং পরিমিতি। যাঁদের গণিত ভালো লাগে, তাঁরা সব অধ্যায় পড়তে পারনে। আর যাঁরা গণিতকে ভয় পান বা সিলেবাস কমিয়ে পড়তে চান, তাঁরা পাটিগণিতীয় সরলীকরণ, ঐকিক নিয়ম, গড়, শতকরা, লসাগু ও গসাগু এবং পিথাগোরাসের উপপাদ্য বাদ দিতে পারেন।
গাণিতিক যুক্তি বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য প্রথমে ৩৫ থেকে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত গণিত প্রশ্নগুলো ভালোভাবে সমাধান করতে হবে। এ থেকে কিছু প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি হয়। আবার এসব প্রশ্ন অনুশীলনের মাধ্যমে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বই থেকে বিসিএসের প্রায় সব প্রশ্ন হয়। আর মাঝেমধ্যে দুয়েকটা প্রশ্ন উচ্চতর গণিত বই থেকেও হয়। গণিতের আগের প্রশ্নগুলো অনুশীলন করলেই বোঝা যায় যে সময়ের তুলনায় প্রশ্নের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই গণিতে দক্ষতা বাড়াতে সময় ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রথমে ৯ম-১০ম শ্রেণির বোর্ড বইয়ের মূল নিয়মের মৌলিক প্রশ্নগুলো সমাধান করার পর সহায়ক বইয়ের উচ্চতর প্রশ্নগুলোয় নজর দিতে হবে। শুরুর দিকে পাটিগণিত চর্চা করুন। কারণ, পাটিগণিত তুলনামূলক সহজ। পরে পর্যায়ক্রমে বীজগণিত ও জ্যামিতিক বিষয় পড়তে পারেন।
ত্রিকোণমিতি অনুশীলনে অনেক সূত্র পাবেন। এসব ক্ষেত্রে একটা সূত্রের সঙ্গে অন্য কয়েকটা সূত্র সম্পর্কিত থাকে। তাই একটা থেকে অন্যগুলো কীভাবে আসে, তা একটু বুঝে তারপর মুখস্থ করলে ভালো ফল পাবেন। পরীক্ষার আগে অন্তত কয়েকটা পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট দেবেন নিজেকে যাচাই করার জন্য ও সময় ব্যবস্থাপনার জন্য। পরীক্ষার খাতায় উত্তরের শুরুর হেডিং, উত্তর লেখার অংশটুকু এবং শেষের সমাপ্তিসূচক চিহ্ন নীল কালি দিয়ে লিখতে পারেন।
মানসিক দক্ষতা
সাধারণত গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার পরীক্ষা একই দিনে হয়। গাণিতিক যুক্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পর মানসিক দক্ষতার পরীক্ষা হয়। এ অংশে ১ ঘণ্টায় ৫০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাই লেখার চাপ থাকে না। কিন্তু মানসিক দক্ষতার পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো না হলে মানসিকভাবে বেশ চাপ ও পরীক্ষার পর মানসিক অশান্তি থাকে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ১৫ নম্বরের জন্য আপনি যা যা পড়েছেন, এবার লিখিত পরীক্ষার ৫০ নম্বরের জন্য আপনাকে ঠিক সেগুলোই পড়তে হবে। ৩৫ থেকে ৪৫তম বিসিএস লিখিত প্রশ্ন এবং বিগত সব প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন (শেষ ৪৬তম প্রিলি পর্যন্ত) সমাধান করে ফেলুন শুরুতেই।
বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণির পরীক্ষায় প্রায়ই মানসিক দক্ষতার কিছু প্রশ্ন আসে। ভালো একটি সহায়ক বই থেকে ব্যাখ্যাসহ সেগুলো পড়বেন। গুগলে সার্চ করলে মেন্টাল অ্যাবিলিটি কোয়েশ্চেন চর্চা করার জন্য অনেকগুলো সাইট পাবেন। সেসব সাইটে বিনা মূল্যে নতুন নতুন প্রশ্ন পাবেন নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য। নানা ধরনের কৌশল জানতে পারেন ইউটিউবে। সার্চ করে প্রচুর ভিডিও পাবেন, যা অবসরে দেখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আবার শুধু গুগল বা ইউটিউবে মাতামাতি করে যেন সময় নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মডেল টেস্টের বই থেকে সপ্তাহে দুই-তিনটি মডেল টেস্ট
দিতে পারেন।