চার বছরেও শেষ হয়নি পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রক্রিয়া
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই)–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের ১০ম গ্রেডের শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া ৪ বছর ধরে আটকে আছে। আবেদনকারী প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলেও এ–সংক্রান্ত রিট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখনো ফল প্রকাশ করা হয়নি। চার বছরেও নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল পিটিআই–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের ৩২৯টি স্থায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর ২০১৯ সালের ২০ জুলাই এমসিকিউ পদ্ধতিতে বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর বাছাই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় গত বছরের ১৭ জানুয়ারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি।
২০২১ সালের ৩ নভেম্বর বাছাই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় গত বছরের ১৭ জানুয়ারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি।
দীর্ঘ চার বছরেও নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা। তাঁরা দ্রুত এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। তানজিয়া পিয়াস নামের একজন পরীক্ষার্থী বলেন, ‘এখন এমন অবস্থায় আছি যে সরকারি চাকরিতেও আবেদনের বয়স নেই। পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের নিয়োগের মাঝখানে আটকে আছি। লিখিত পরীক্ষা দিয়েও ফল পাচ্ছি না। অসংখ্য পরীক্ষার্থীর ওপর নির্ভর করে আছে তাঁর পরিবার। আমি নিজেও হতাশায় ভুগছি। যেখানে যাই, সেখানে বিভিন্নভাবে হেয় হতে হয় কোনো চাকরি হচ্ছে না বলে।’
লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে, ‘একই বিজ্ঞপ্তির অন্যান্য পদের প্রার্থীদের (ইন্সট্রাক্টর-বিজ্ঞান, কৃষি, শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা) নিয়োগের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ করেছে পিএসসি। আমাদের সঙ্গে সে সময় যাঁরা এসব পদে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা এখন চাকরি করছেন। অথচ আমরা এখনো লিখিত পরীক্ষার ফল পেলাম না।’
বর্তমানে সারা দেশে ৬৭টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। ঢাকা ও নড়াইল জেলা বাদে প্রতিটি পিটিআইয়ের সঙ্গে একটি করে পরীক্ষণ বিদ্যালয় আছে। সেগুলো পিটিআই–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। এসব বিদ্যালয়ে ১০ম গ্রেডে ৫টি করে শিক্ষকের পদ রয়েছে। ২০০৮ সালে পিটিআই–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের ২১৪ জন শিক্ষককে পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর অনেকে শিক্ষক পদ থেকে অবসরে গেছেন। ফলে ১০ম গ্রেডে শিক্ষকের ৩২৯টি পদ শূন্য হয়ে যায়। এই ৩২৯টি পদের জন্য পিএসসি ২০১৯ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২১৪ জন শিক্ষক পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর পিটিআই যে পৌর এলাকায় অবস্থিত, সেই এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের নির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে পিটিআই–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে সংযুক্তি প্রদান করা হয়। এর পর থেকে তাঁরা পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে কর্মরত। পিএসসি ৩২৯টি শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে এসব শিক্ষক পিএসসির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেন। মোট পাঁচটি রিট মামলা করা হয়। এসব মামলার কারণে নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে আছে।
প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ঢাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের দাবি অযৌক্তিক। কারণ, তাঁদের নিয়োগ হয়েছে ১৩তম গ্রেডে সহকারী শিক্ষক পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে তাঁদের সাময়িকভাবে আনা হয়েছে। তাঁরা মামলা করে নতুন চাকরিপ্রার্থীদের সময়ক্ষেপণ করছেন শুধু।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এ নিয়োগ নিয়ে মোট পাঁচটি মামলা করেছেন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এর মধ্যে একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। যে মামলায় বিভাগীয় প্রার্থীদের পদ সংরক্ষণের বিষয় ছিল, সেটিও খারিজ হয়েছে। অন্যান্য মামলায় পদ সংরক্ষণের বিষয় উল্লেখ নেই। যেহেতু সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই সরকারি কর্ম কমিশন চাইলে এ পদে নিয়োগ কার্যক্রম চালু রাখতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে যোগাযোগ করা হলে পিএসসির পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পরীক্ষা নিয়ে পাঁচটি মামলা চলমান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা মামলাগুলোর সার্টিফায়েড কপি চেয়েছি। সেগুলো পেলে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’