অফিস শেষে ধরতে হবে না বসের ফোন, আইন পাস
নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরে বস ই–মেইল করেন বা কাজ শেষ হওয়ার পরেও খুদে বার্তা দেন। অনেক কর্মী বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেন না, বিরক্ত হন। তবে অস্ট্রেলিয়ায় কর্মীরা এখন থেকে এমন সব ব্যাপার থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। এখন কর্মীদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে ফোন ধরতে যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে আইন পাস করেছে দেশটি। গতকাল সোমবার থেকেই সেই আইন কার্যকরও হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল চালু হওয়া এই নতুন আইনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজের সময়ের বাইরে পাঠানো ই–মেইল না পড়লে বা ফোন না ধরলে সেই কর্মীকে কোনো শাস্তি দেওয়া যাবে না। এই আইনের পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁদের মতে, কাজের পরে ফোন বা ই–মেইল যে কারও ব্যক্তিগত সময়ে বা ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়, তার বিরুদ্ধে একটা কড়া বার্তা দেবে।
নতুন এই আইনের নামকরণ করা হয়েছে ‘রাইট টু ডিসকানেক্ট’ হিসেবে। এই আইনের আওতায় এখন থেকে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে কোনো অফিসের বস যদি কর্মীকে ফোন দেন, তবে কর্মীর সেই ফোন না ধরার অধিকার থাকবে বা পাবেন। তবে এই আইনে নিয়োগকর্তা বা বসরা কর্মীদের ফোন কল, ই–মেইল বা বার্তা পাঠাতে পারবেন না—এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ানরা গড়ে ২৮১ ঘণ্টা বাড়তি, বেতনহীন কাজ করেন। এ কাজের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৮৮ বিলিয়ন মর্কিন ডলার।
নতুন আইন অনুসারে যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মী ১৫ জনের বেশি, সেখানকার কর্মীরা কর্মঘণ্টার বাইরে চাইলে তাঁদের বস বা সহকর্মীর ফোন কল, ই–মেইল ও বার্তার জবাব না দিলেও পারবেন। এমনকি কোনো সেবাগ্রহীতাও যদি কোনো কর্মীর সঙ্গে কর্মঘণ্টার বাইরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন, তাহলে তা তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন।
নতুন এই আইন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য অবশ্য এক বছর পর থেকে কার্যকর হবে। ১৫ জনের বেশি কর্মী থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গতকাল থেকেই কার্যকর হয়ে গেছে। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোয় আইন কার্যকর হবে আগামী বছরের আগস্ট থেকে।
কর্মের খাতিরে যদি কখনো কোনো কারণে এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে কর্মী ও তাঁর নিয়োগকর্তার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে উভয়ই অস্ট্রেলিয়ার ফেয়ার ওয়ার্ক কমিশনে মামলা করতে পারবেন। কমিশন বাস্তবতার আলোকে নির্ধারণ করে দেবে প্রতিষ্ঠান এবং কর্মী কোন শর্তের আলোকে তাঁদের মধ্যকার যোগাযোগ চালিয়ে যাবেন। কোনো কর্মীকে এ আইন খেলাপের জন্য ১৯ হাজার অস্টেলিয়ান ডলার পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে এই সংস্থা। কোনো সংস্থার জন্য জরিমানার পরিমাণ যেতে পারে ৯৪ হাজার অস্টেলিয়ান ডলার পর্যন্তও৷
অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জন হপকিনস বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার আগে এমন কোনো অনধিকার চর্চা ছিল না। মানুষ কাজ শেষ করে বাসায় যেতেন আর পরের দিন কাজে ফেরা পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ থাকত না। কিন্তু এখন ই–মেইল, মেসেজ, ফোন কল—সবই আসতে থাকে কাজ শেষ হওয়ার অনেক পরেও। এমনকি ছুটির দিনেও এমনটা ঘটে।
অস্ট্রেলিয়া ইনস্টিটিউট গত বছর একটি জরিপ চালায়, যেখানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ানরা গড়ে ২৮১ ঘণ্টা বাড়তি, বেতনহীন কাজ করেছেন। এই কাজের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ১৩০ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের সমান (৮৮ বিলিয়ন মর্কিন ডলার)।
ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে এমন আইন রয়েছে, এ তালিকায় এবার যুক্ত হলো অস্ট্রেলিয়াও। ২০১৭ সালে এমন আইন চালু করেছে ফ্রান্স।