বিতাড়নের ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রে খণ্ডকালীন চাকরি ছাড়ছেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা

যুক্তরাষ্ট্র এফ–১ ভিসায় থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেয়ছবি: এপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভারতীয় শিক্ষার্থীরা সে দেশ থেকে বিতাড়নের ভয়ে আছেন। এ কারণে তাঁরা খণ্ডকালীন চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের আগে দেশটিতে থাকা ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বাড়তি অর্থের জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। কিন্তু এখন তাঁরা ট্রাম্পের অভিবাসী বিতাড়ন সিদ্ধান্তের কারণে ভয়ে তা দিচ্ছেন।

কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য এ ধরনের চাকরিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসায় তাঁরা ভয়ে আর শিক্ষার্থী ভিসার নিয়ম লঙ্ঘন করতে চান না। বিশেষ করে তাঁদের পড়াশোনার জন্য নেওয়া বিশাল শিক্ষাঋণের কারণে বিতাড়নের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্র এফ–১ ভিসায় থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেয়। তবে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে প্রায়ই রেস্তোরাঁ, গ্যাস স্টেশন বা খুচরা দোকানে অনথিভুক্ত কাজ করে ভাড়া, মুদি এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার খরচ মেটাতেন। বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসননীতি আরও কঠোর করতে পারে, এতে তাঁদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে—এমন উদ্বেগের কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখন এ ধরনের আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না।

ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী অর্জন বলেন, ‘মাসিক খরচ মেটানোর জন্য কলেজ শেষে একটি ছোটো ক্যাফেতে কাজ করতাম। প্রতি ঘণ্টায় ৭ ডলার আয় করতাম। আর প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা কাজ করতাম। এটা একটা ভালো ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এ ধরনের অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে শুনে গত সপ্তাহে চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। আমি কোনো ঝুঁকি নিতে পারব না। বিশেষ করে এখানে পড়াশোনা করার জন্য ৫০ হাজার ডলার (প্রায় ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা) ঋণ নেওয়ার পর তা আরও পারি না।’

আরও পড়ুন

নিউইয়র্কে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী নেহাও একই উদ্বেগের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে আমরা র‌্যান্ডম চেকের কথা শুনেছি। তাই, আমার বন্ধুরা এবং আমি আপাতত কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা কঠিন। কিন্তু বিতাড়ন বা শিক্ষার্থী ভিসার মর্যাদা হারানোর ঝুঁকি নিতে চাই না। এখানে আমাদের পাঠিয়ে বাবা-মায়েরা ইতিমধ্যে অনেক আত্মত্যাগ করেছেন।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, কয়েক মাস পরে পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা করে তারপরে কাজ আবার শুরু করবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।

এই সময়টা শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করছেন। অনেকে বন্ধু ও পরিবারের কাছ থেকে টাকা ধার করছেন। টেক্সাসে কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী রোহন শ্রীকান্ত বলেছেন, ‘কিন্তু এটি কোনো টেকসই সমাধান নয়। আমি ইতিমধ্যে আমার বেশিরভাগ সঞ্চয় খরচ করে ফেলেছি। রুমমেটের কাছ থেকে অল্প পরিমাণে টাকা ধার নেওয়া শুরু করেছি। আমি জানি না কত দিন এভাবে চলতে পারব।’

আরও পড়ুন

রোহান আরও বলেন, ‘সাহায্যের জন্য বাবা-মায়ের কাছে যাওয়া অস্বস্তিকর। কারণ, তাঁরা এমনিতেই চাপে আছেন। তাঁদের কাছে টাকা চাইলে অপরাধবোধ কাজ করে। তবে হয়তো আমাকে শিগগির তা করতে হবে। কারণ, আমি এখন অন্য কোনো বিকল্প দেখছি না।’

আরও পড়ুন