এটিইও নিয়োগে জটিলতার সমাধান নেই এক বছরেও
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ১৫৯ জন সহকারী উপজেলা/ থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় এক বছর হলেও এখনো পরীক্ষা গ্রহণের কোনো পদক্ষেপ নেই। চারটি মামলার কারণে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে জটিলতার দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনাও কম।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ জুন ১৫৯ জন এটিইও নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় উচ্চ আদালত নিয়োগ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রমে গতি আসবে না।
উপজেলা ও বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসগুলোতে উচ্চমান সহকারী পদের কর্মকর্তারা এটিইও পদে বিভাগীয় প্রার্থীর সুবিধা চেয়ে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় হাইকোর্ট নিয়োগ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। অপর তিনটি মামলা করেছেন ২০১৫ সালের এটিইও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীরা। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উন্মুক্ত প্রার্থীরা রয়েছেন, তাঁরা পদ সংরক্ষণ চেয়ে মামলা করেছেন। সেসব প্রার্থীর দাবি, সে সময় পদ ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সেসব প্রার্থীর জন্য কিছু পদ সংরক্ষণের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু কোনো মামলাই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করতে বলায় স্থগিত করেছি। আমাদের কাজ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা নেওয়া। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করতে বলে, তাহলে আমাদের করার কিছু থাকে নাপিএসসি কর্মকর্তা
নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চমান সহকারীরা এটিইও পদে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের মতো বিভাগীয় প্রার্থীর আবেদনের সুযোগ চেয়ে মামলা করেছেন। উচ্চমান সহকারীদের মামলায় হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। অপর তিনটি মামলাও বিচারধানী। রাষ্ট্রপক্ষ এই চার মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু কবে নিষ্পত্তি, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ, মামলাগুলো বিচারাধীন।
গত বছরের ২৬ জুন ১৫৯ জন সহকারী উপজেলা/ থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কিন্তু গত ৩০ জুলাই হঠাৎ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত হাওয়ার প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন আবেদনকারী প্রার্থীরা।
একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত জেসমিন আক্তার (ছদ্ম নাম) প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর এটিইও পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হওয়ায় ভেবেছিলাম, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকের পাশাপাশি ওই পদের জন্য পড়াশোনা করব। কিন্তু মামলা জটিলতার কারণে সবকিছু থমকে গেছে। এমনিতেই সহকারী শিক্ষক পদ থেকে পদোন্নতি নেই বললেই চলে, সে ক্ষেত্রে এটিইও পদে সুযোগ ছিল আমাদের জন্য ভালো কিছু করার। চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে, তাই অন্য চাকরিতে আবেদন করতে পারছি না। এটাই শেষ ভরসা এখন আমার জন্য। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ দ্রুত সবকিছুর সমাধান করে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’
এটিইও পদে আবেদনের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে বিভ্রান্তিতে ছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিশেষ করে প্রাথমিকে যোগ দেওয়া নতুন শিক্ষক, অর্থাৎ যাঁদের চাকরির অভিজ্ঞতা দুই বছর হয়নি, তাঁরা আবেদন করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা ছিল না বিজ্ঞপ্তিতে। সে সময় পিএসসি থেকে বলা হয়েছিল, সরকারি বিধি অনুযায়ী, বিভাগীয় প্রার্থীদের চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ নিয়ম অনুযায়ী, সহকারী উপজেলা/ থানা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কমপক্ষে দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু পিএসসির আবেদন পোর্টালে টেলিটকের সিস্টেমে যাঁদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দুই বছরের কম ছিল, তাঁরাও আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন এবং অনেকেই আবেদন করেছেন।
এরপর গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা (২০২৩) গেজেট আকারে প্রকাশ করে। নিয়োগ বিধিমালায় বলা হয়, এটিইও পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত এবং ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের জন্য। বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বোঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থী প্রধান শিক্ষক হলে তাঁর কমপক্ষে তিন বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রার্থী সহকারী শিক্ষক হলে তাঁর কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এটিইও পদে সাধারণ প্রার্থীদের বয়স ৩০ বছর পর্যন্ত। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে এই পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা যাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ আছে। নতুন নিয়োগ বিধিমালা প্রকাশের পর দুই বছরের কম অভিজ্ঞ শিক্ষক, যাঁরা এটিইও পদে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা আবেদন ফি ফেরতের দাবি জানান। কারণ, তাঁরা ফি দিয়ে আবেদন করেছেন এবং নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের আবেদন গৃহীত হবে না।
এ বিষয়ে পিএসসির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করতে বলায় আমরা স্থগিত করেছি। আমাদের কাজ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা নেওয়া। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করতে বলে, তাহলে আমাদের করার কিছু থাকে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নিয়োগ কার্যক্রম যেদিন শুরু করতে বলবে, সেদিনই আবার আমরা কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’