বাংলাদেশে ক্যারিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতা কেমন? এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ কী?
উত্তর: বাংলাদেশে সাংবাদিকতাকে ক্যারিয়ার হিসেবে অনেকে বেছে নিচ্ছেন। তবে প্রাথমিক চাকরি হিসেবে অনেকে সাংবাদিকতা পেশাকে বেছে নেন। আপনারা জানেন, দেশে সাংবাদিকতাবিষয়ক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভাগ চালু হয়েছে। যার কারণে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী এ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। প্রথমে তাঁরা উদ্দীপনার সঙ্গে এ পেশা বেছে নিলেও পরে অবশ্য বেতন-ভাতার সুযোগ-সুবিধার অভাব, চাকরির নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আর বেশি দিন সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেন না। একটা পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি জনসংযোগ বিভাগে চাকরি স্থানান্তর করতে দেখা যায়। তবে যাঁরা সাংবাদিকতা পেশায় পেশাদারির সঙ্গে লেগে থাকেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ ভালো। আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অনেক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ একটি বিষয়। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোতে এর চর্চার সুযোগ খুব কম। এ ছাড়া পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণেরও ঘাটতি রয়েছে, তারপরও হাতে গোনা অল্প কয়েকজন খুব স্ট্রাগল করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আপনি কীভাবে ক্যারিয়ার শুরু করলেন? একটু একটু করে কীভাবে ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিলেন?
উত্তর: প্রথমে টুকটাক লেখালেখির মাধ্যমে পত্রপত্রিকায় প্রদায়কের কাজ দিয়ে শুরু। এরপর একুশে টেলিভিশন, এটিএন নিউজ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন, সব মিলে ১৬-১৭ বছর কেটে গেল। পত্রিকার সাংবাদিকতার সঙ্গে টেলিভিশন সাংবাদিকতা কিংবা ব্রডকাস্ট সাংবাদিকতার অন্যতম পার্থক্য হলো শুদ্ধ উচ্চারণ। কারণ, আপনাকে যেকোনো সময় লাইভ সম্প্রচারে সংযুক্ত হতে হবে। আমি ক্যারিয়ারের শুরুতে স্বরকল্পন নামক আবৃত্তি সংগঠনে প্রমিত উচ্চারণের কর্মশালা করি। এরপর এখন কণ্ঠশীলনের সদস্য হিসেবে কাজ করছি। প্রতি সপ্তাহে এক দিন উচ্চারণের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনায় বসি। কারণ, উচ্চারণ শুদ্ধ করতে হলে সব সময় চর্চা করতে হয়। সমসাময়িক অনুসন্ধানের ধারা নিয়ে গবেষণা ও নানা ধরনের সংক্ষিপ্ত কোর্স করার পাশাপাশি যোগাযোগের দক্ষতা একজন সাংবাদিককে একটা মানদণ্ডে পৌঁছে দেয়, যা আমি চেষ্টা করি।
এ পেশায় বেতন-ভাতা কেমন?
উত্তর: শুরুতেই এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। একেবারে ফ্রেশারদের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় মূলধারার গণমাধ্যমে বেতন ধরা হয়। ধীরে ধীরে অবশ্য বেতন বাড়ে। তবে যাঁরা লেগে থাকেন এবং নিজেদের মান উন্নয়ন করতে বদ্ধপরিকর, তাঁরা অনেক দূর এগিয়ে যান। এ ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল, পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা ও সংশ্লিষ্ট বিটবিষয়ক বিশদ জানাশোনা থাকলে একটা সময় যে কেউ হেড অব নিউজ বা স্টেশনপ্রধান পর্যন্ত হতে পারেন। সবার আগে নিজেকে নিজের পেশার প্রতি সম্মান করতে হবে।
আপনার অর্জন কী কী?
উত্তর: দেখুন, আমি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় অনুসন্ধানমূলক ক্রাইম শো তালাশের ইনচার্জ হিসেবে আছি। আমার টিমে ১০ জন কাজ করে। একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে রিপোর্টার, ভিডিওগ্রাফার, ভিডিও এডিটর, প্রডিউসার, গ্রাফিক টিমসহ আরও কিছু টেকনিক্যাল ব্যক্তি একযোগে কাজ করে। এককথায় যাকে বলা যায় টিমওয়ার্ক। আমার টিমের বেশ কিছু অর্জন আছে, আমরা টানা দুই বছর টিআইবির সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার, দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, ব্র্যাক মাইগ্রেশন অ্যাওয়ার্ড, র্যাব মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, ইউনিসেফ মিনা অ্যাওয়ার্ড, ক্র্যাব অ্যাওয়ার্ডসহ আরও বেশ কিছু অর্জন আমাদের আছে। আশা রাখছি, সামনের দিনগুলোতেও আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
নতুন যাঁরা এই পেশায় আসতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে এ পেশায় এগিয়ে যাওয়া যাবে?
উত্তর: নতুন যাঁরা এ পেশায় আসতে চান, তাঁদের জন্য পরামর্শ হলো, আপনারা ভাবুন, চিন্তা করুন, আপনি কেন আসতে চান এ পেশায়? আপনি যদি কমিটেড থাকেন যে হ্যাঁ আপনি এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান; তাহলে উজাড় করে কাজ শুরু করেন। শুরুতে কম বেতন, কাজের সুযোগের অভাব আপনার উৎসাহ কমিয়ে দিতে পারে; কিন্তু আপনি যদি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হন, তবেই একসময় আপনি সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার উপভোগ করতে পারবেন। সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা, বিটবিষয়ক দক্ষতা ও জ্ঞান, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আপনার বিকশিত ধারণা সাংবাদিকতা পেশায় অত্যন্ত জরুরি বিষয়।