করোনায় চাকরি আবেদনের বয়স শেষদের কী হবে?
করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত সব ধরনের সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি বন্ধ আছে। এই সময়ে অনেকের চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হয়ে গেছে। তাঁরা চাইছেন দেশের এই বিশেষ সময়ের কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যেসব চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, সেখানে যেন তাঁদের আবেদনে বয়সের শর্ত শিথিল করা হয়। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন মো. রায়হান। তিনি বিভিন্ন চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত ২১ মে তাঁর সরকারি চাকরিতে আবেদনের শেষ দিন ছিল। ওই দিন তাঁর বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুসারে তিনি আর নতুন কোনো চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন না।
রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হওয়ার আগে কয়েকটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পাবে। সেখানে আমি আবেদন করতে পারব। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েক মাসে সব বন্ধ থাকায় কোনো সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। তাই নতুন কোনো চাকরিতে আবেদন করতে পারলাম না। সরকার যদি আমাদের কথা ভেবে এখন নতুন চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এই কয়েক মাস আমলে নিয়ে নিয়োগে আবেদনের সময় পিছিয়ে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তাহলে যাঁদের আবেদনের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের উপকার হতো। আমি মনে করি সরকার সমস্যার বিষয়টি বুঝতে পারবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান থেকে পাস করেছেন সাব্বির হোসেন। তাঁর সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয় ৩০ এপ্রিল। রায়হানের মতো সাব্বিরেরও সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা শেষ। সাব্বির বলেন, ‘সরকার তো এই করোনার সময় কত কিছুই করছে। অনেক সুদ মাফ করে দেওয়া থেকে শুরু করে নানা জরিমানা মওকুফ করে দিচ্ছে। আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে এখন থেকে কয়েক মাস যেসব চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে, সেখানে বয়সের শিথিলতা করতে পারে। তাহলে আমরা যাঁরা করোনার কারণে চাকরির বয়স খোয়ালাম, তাঁরা ভীষণ উপকৃত হতাম।’
ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজিতে পড়াশোনা শেষ করেছেন আসিফ হোসেন। তিনি জানান, গত ১০ এপ্রিল তাঁর চাকরিতে আবেদনের শেষ সময় ছিল। করোনার কারণে তাঁর মতো আরও অনেকের চাকরিতে আবেদনের সময় শেষ হয়ে গেছে। এই সময়ে সরকার যদি চাকরিতে প্রবেশের সময় বৃদ্ধি না করে, তাহলে সারা জীবন আক্ষেপ থেকে যাবে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান একরাম আহম্মেদ মনে করেন, চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়াতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে। তা না করে করোনার কারণে যাঁরা চাকরিতে আবেদন করতে পারলেন না, তাঁদের বিষয়ে সরকার ভূমিকা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বয়সের প্রমাণ দেখে আবেদনের সুযোগ দিতে পারে। এটি সরকার স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতে পারে আবার কোনো প্রার্থীর আবেদনের ওপর ভিত্তি করেও করতে পারে।
একরাম আহম্মেদ বলেন, ‘যাঁরা এরই মধ্যে চাকরিতে আবেদন করে ফেলেছেন কিন্তু পরীক্ষা হয়নি বা ফল প্রকাশিত হয়নি, তাঁরা এ সমস্যার বাইরে। কিন্তু নতুন আবেদনকারীদের এ সমস্যা সরকার বিবেচনা করে দেখতে পারে। যেহেতু করোনার মতো সমস্যা এর আগে তৈরি হয়নি। এটি আমাদের সবার কাছেই একটি বড় সংকট। এই সংকটে অনেক কিছুই বদলে গেছে। চাকরির আবেদনকারীরাও এই সংকটে পড়েছেন। তাঁদের সমস্যাটি নিয়ে সরকার ভাবতে পারে।’
করোনায় যাঁরা সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স খোয়ালেন, তাঁদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চাকরিপ্রার্থীদের বয়সের বিষয়টি সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি। এখন তো অনেক দিন পর অফিস খুলেছে, এটা নিয়ে আমরা অবশ্যই আলোচনা করব। এটা তাৎক্ষণিক মতামত দেওয়ার বিষয় নয়। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’