স্থানীয় কর্মীদের কারণেই ভালো করছে হুয়াওয়ে
>হুয়াওয়ে টেকনোলজিস বাংলাদেশের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) হিসেবে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন জেরি ওয়্যাং। বাংলাদেশে যোগ দেওয়ার আগে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জেরি ওয়্যাং বাংলাদেশে হুয়াওয়ের বর্তমান ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম
প্রথম আলো: বাংলাদেশে হুয়াওয়ের ব্যবসা এখন কেমন চলছে?
জেরি ওয়্যাং: বাংলাদেশে ১৯৯৯ সাল থেকে ব্যবসা করছে হুয়াওয়ে। এ দেশে এখন হুয়াওয়ের চার ধরনের ব্যবসা করছে। এগুলো হলো ক্যারিয়ার বিজনেস, এন্টারপ্রাইজ বিজনেস, কনজিউমার বিজনেস ও ক্লাউড সার্ভিস। ক্যারিয়ার বিজনেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় সব মোবাইল ফোন অপারেটর ও টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক তৈরিতে কাজ করছে হুয়াওয়ে। এন্টারপ্রাইজ বিজনেসের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড ডিজিটাল করায় সহায়তা দেয় হুয়াওয়ে। কনজিউমার বিজনেসের মাধ্যমে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বাজারজাত করা হচ্ছে। হুয়াওয়ের নতুন ব্যবসা হলো ক্লাউড সার্ভিস। এ সেবার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
প্রথম আলো: এ চার ব্যবসার অবস্থা কেমন?
জেরি ওয়্যাং: ক্যারিয়ার বিজনেসে বাংলাদেশে হুয়াওয়ে এখন এক নম্বরে আছে। দেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের প্রতিটিই নেটওয়ার্ক তৈরিতে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। এ ছাড়া ফিক্সড ল্যান্ডফোন, বিডব্লিউএ, এনটিটিএনের মতো যত টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আছে, তারাও হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। ক্যারিয়ার বিজনেসে বাংলাদেশে হুয়াওয়ের ধারেকাছে কোনো কোম্পানি নেই। কনজিউমার বিজনেস, অর্থাৎ স্মার্টফোন ব্যবসাতেও হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি খুব ভালো। গত তিন বছরে সব চীনা ব্র্যান্ডের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি করেছে হুয়াওয়ে। এন্টারপ্রাইজ বিজনেস ও ক্লাউড সার্ভিস তুলনামূলকভাবে নতুন সেবা হলেও এখানেও বেশ ভালো করছে হুয়াওয়ে।
প্রথম আলো: ক্লাউড সেবার বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাইছি।
জেরি ওয়্যাং: বিশ্বের ১৭০টি দেশে হুয়াওয়ের ব্যবসা আছে। এসব দেশে ব্যবসার তথ্য সংরক্ষণের জন্য হুয়াওয়ের নিজস্ব ক্লাউড সেবা আছে। এত বড় নিজস্ব ক্লাউড সেবা বিশ্বের আর কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। এত দিন এটি শুধু হুয়াওয়ের নিজস্ব প্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যবহার করা হতো। কিন্তু গ্রাহক চাহিদা থাকায় এখন অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্যও এ সেবা দিতে শুরু করেছে হুয়াওয়ে।
প্রথম আলো: স্মার্টফোন ছাড়াও হুয়াওয়ের বেশ কিছু স্মার্ট ডিভাইস আছে। বাংলাদেশের বাজারে এসব ডিজিটাল পণ্য নিয়ে আপনাদের লক্ষ্য কী?
জেরি ওয়্যাং: আমাদের সব পণ্যের মূল লক্ষ্য পণ্যগুলো যেন গ্রাহককেন্দ্রিক হয়। গ্রাহকের আস্থা অর্জন করে তাঁদের সবচেয়ে পছন্দের স্মার্ট ডিভাইস ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে চায় হুয়াওয়ে। এ জন্য স্থানীয় বাজারের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে হুয়াওয়ে। যেমন স্মার্টফোন ব্যবহারে বাংলাদেশের গ্রাহকেরা কী চান, সেটা পূরণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই আমরা। এ জন্য স্মার্টফোনে স্থানীয় বিষয়বস্তু যোগ করা ও ফোনকে গ্রাহকবান্ধব করে তুলতে প্রতিনিয়ত গবেষণা করে হুয়াওয়ে। তবে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন ব্যবসায় যত মুনাফা হয়, তার ৯৫ শতাংশই অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের দখলে রয়েছে। হুয়াওয়ে এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে, যাতে ভবিষ্যতে স্মার্টফোনের বাজারে টিকে থাকতে পারে। এ জন্য হুয়াওয়ের মোট আয়ের ১৫ শতাংশ গবেষণায় খরচ করা হচ্ছে। হুয়াওয়ের গবেষণা বিভাগে কাজ করেন ৮০ হাজারের বেশি কর্মী।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে সম্প্রতি ফোর-জি সেবা চালু হয়েছে। এ সেবা নিয়ে হুয়াওয়ে কীভাবে কাজ করছে?
জেরি ওয়্যাং: বাংলাদেশে ফোর-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে হুয়াওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারত, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই ফোর-জি নেটওয়ার্ক তৈরিতে কাজ করেছে হুয়াওয়ে। শুধু চীনেই হুয়াওয়ের ফোর-জি উপযোগী টাওয়ার বা সাইট আছে ২০ লাখের বেশি। তবে বাংলাদেশে ফোর-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বড় বাধা হলো ফোর-জি উপযোগী হ্যান্ডসেটের স্বল্পতা। এ দেশে মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ১০ শতাংশের হাতে ফোর-জি উপযোগী স্মার্টফোন নেই। এ ছাড়া ইন্টারনেটে দেখার বিষয়বস্তুরও সমস্যা আছে বাংলাদেশে। এ দুটি সমস্যা দূর করা গেলে বাংলাদেশে ফোর-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের বড় সম্ভাবনা আছে।
প্রথম আলো: হুয়াওয়ের বাংলাদেশে লোকবল কত?
জেরি ওয়্যাং: বাংলাদেশে হুয়াওয়ের সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক কর্মী আছেন। এর ৮৫ শতাংশই বাংলাদেশি নাগরিক। বাংলাদেশের স্থানীয় কর্মীরা খুবই প্রতিভাবান। তাঁদের কারণেই বাংলাদেশে আমাদের প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িকভাবে ভালো করছে। আমরা এসব কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য আমরা প্রতিবছর বাংলাদেশের কিছু প্রতিভাবান ছাত্রকে চীনে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নির্মাণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে চাই। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা বাংলাদেশের সরকার ও বেসরকারি খাতকে সহায়তা করছি।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের বাজার নিয়ে হুয়াওয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
জেরি ওয়্যাং: ক্যারিয়ার ব্যবসায় হুয়াওয়ের লক্ষ্য হলো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করা। সর্বোপরি বাংলাদেশে এমন একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যা ব্যবহারকারীদের সেরা অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। আমরা সব সময় ক্যারিয়ার গ্রাহকদের জন্য সেরা ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করি।
এন্টারপ্রাইজ ব্যবসায় আমরা উদ্ভাবনী, ব্যতিক্রমী এবং সেরা আইসিটি হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সেবা দিচ্ছি। আমাদের পণ্য উন্মুক্ত, প্রাণবন্ত, নমনীয় ও নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের জন্য সহযোগিতা করে। পাশাপাশি ডিজিটাল রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।
ডিভাইস ও কনজিউমার ব্যবসায় হুয়াওয়ে ভোক্তা অভিজ্ঞতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। গ্রাহকের পছন্দের স্মার্ট ডিভাইস ব্র্যান্ড হওয়ার জন্য হুয়াওয়ে ক্রমাগতভাবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।