বেসিক ব্যাংক: ফিরতে চান বড় ঋণখেলাপিরা
রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের বড় খেলাপিরা একসময় ব্যাংকটিকে এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু এখন অনেক খেলাপি গ্রাহকই ঋণ পুনঃ তফসিলে দেওয়া বিশেষ সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যাংকে আসছেন। তাঁদের কাছ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করার আবেদন পেয়েছে বেসিক ব্যাংক। এতে ব্যাংকটি কিছুটা আশার আলো দেখছে।
বেসিক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে ঋণের টাকা আদায় হলে ব্যাংক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। এরপর অন্য গ্রাহকদেরও একইভাবে ঠিক করা যাবে।
রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে একসময় বেসিক ব্যাংকই খুব ভালো অবস্থায় ছিল। কিন্তু আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হওয়ার পরই ব্যাংকটি খারাপ করতে থাকে। সরকার তাঁকে ২০০৯ সালে প্রথম দফায় তিন বছর ও ২০১২ সালে আরও দুই বছরের জন্য এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হওয়ার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালের ২৯ মে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করে। সরকার আবদুল হাইকে অপসারণ না করে ওই বছরের ৬ জুলাই পদত্যাগের সুযোগ দেয়। তাঁর সময়েই ব্যাংকটিতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি হয়। তাঁর সময়ে দেওয়া প্রায় সব ঋণই এখন খেলাপি। এ ছাড়া ব্যাংকটির অন্য অনেক ঋণও খারাপ হয়ে পড়ে। ফলে গত জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ১১৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৬ মে ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন ঋণ শোধসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে। সে অনুযায়ী খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য পুনঃ তফসিল সুবিধা নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহারও ঠিক করে দেওয়া হয় ৯ শতাংশে। এসব গ্রাহকের সুদ মওকুফের সুযোগও রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ এ সুবিধার জন্য আবেদনের শেষ সময় ছিল গত ২০ অক্টোবর। এরপর সময় বাড়ানো হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের দেওয়া ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিল করার সুযোগে ভালো সাড়া মিলেছে। বলা হয়, ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিতে সরকারের পরামর্শে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
>ঋণ পুনঃ তফসিলের বিশেষ সুযোগ কাজে লাগাতে চান অনেক খেলাপি গ্রাহক। তাঁরা ২,৮০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করার আবেদন জানিয়েছেন।
বেসিক ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংকটির ৪৬১ জন গ্রাহক ৬৫ কোটি টাকা জমা দিয়ে ঋণ নবায়নের আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ব্যাংকটির শীর্ষ ২০ গ্রাহকের পাঁচজন রয়েছেন।
এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ এ রকম—আমাদের বাড়ির ১৭৪ কোটি টাকা, আইজি নেভিগেশনের ১২০ কোটি টাকা, ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ বিল্ডার্সের ১১৭ কোটি টাকা, কক্স ডেভেলপারের ১০৪ কোটি টাকা ও এআরএসএস এন্টারপ্রাইজের ১০২ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আলম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি খেলাপি গ্রাহকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। অনেককে পাওয়া যায়নি। আবার বড় কয়েকজন গ্রাহক টাকা জমা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এবার খেলাপিরা ভালো সাড়া দিয়েছেন। খেলাপিদের ঠিক করতে একটা সুযোগ মিলেছে, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তবে সব গ্রাহকের সঙ্গে যে ব্যাংক যোগাযোগ করতে পেরেছে, তা-ও নয়। যেমন গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান নিউ অটো ডিফাইন ও ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজের মালিক ওয়াহিদুর রহমানের সঙ্গে এখন পর্যন্ত ব্যাংকটি যোগাযোগ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ২০০ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, কয়েকটি গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক ওয়াহিদুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায়। এমন আরও কয়েকজন গ্রাহক রয়েছেন ব্যাংকটিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ দিয়েছিল। পরে তা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।