ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ সেবা
বিকাশের ১৫ হাজার গ্রাহক পেলেন সিটি ব্যাংকের ঋণ
ই-কেওয়াইসির বাইরে সনাতন পদ্ধতিতে যাঁরা বিকাশের গ্রাহক হয়েছেন, তাঁরাও এখন থেকে এ ঋণ পাবেন।
বিকাশের নিবন্ধিত সব গ্রাহককে ক্ষুদ্রঋণ দিতে সিটি ব্যাংককে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বায়োমেট্রিকের বাইরে যাঁরা সনাতন পদ্ধতিতে বিকাশের গ্রাহক হয়েছেন, তাঁরাও এখন থেকে এ ঋণ সুবিধা পাবেন। তবে সিটি ব্যাংক যখন এই সুবিধা চালু করবে, তখনই ঋণ পাবেন বিকাশের সব গ্রাহক।
সিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী মার্চের মধ্যেই বিকাশের সব গ্রাহকের জন্য অতি ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা চালু করতে চায় ব্যাংকটি। যদিও কোন গ্রাহক ঋণ পাবেন, তা নির্ধারণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) প্রযুক্তি।
এদিকে বিকাশের গ্রাহকদের মধ্যে যাঁদের ই-কেওয়াইসি রয়েছে, তাঁদের মধ্য থেকে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক এ ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। গড়ে ঋণের পরিমাণ তিন হাজার টাকা। ফলে এই খাতে সিটি ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এখন প্রায় পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। চলতি বছর বিকাশের গ্রাহকদের ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিটি ব্যাংক।
বিকাশের সব গ্রাহককে ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছি। ফলে শিগগিরই বিকাশের নতুন-পুরোনো সব গ্রাহক ঋণ পাবেন। নতুন চালু করা এই সেবায় বিকাশের গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে।মাসরুর আরেফিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিটি ব্যাংক
জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিকাশের সব গ্রাহককে ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছি। ফলে শিগগিরই বিকাশের নতুন-পুরোনো সব গ্রাহক ঋণ পাবেন। নতুন চালু করা এই সেবায় বিকাশের গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে। সবার জন্য সেবাটি চালু হলে দেশের সব প্রান্তে এই সুবিধা পৌঁছে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’
মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে গত ১৫ ডিসেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ চালু করে বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংক। এ ঋণ পেতে বিকাশ গ্রাহকদের কোথাও যেতে হচ্ছে না। এমনকি কোনো নথিতেও স্বাক্ষর করতে হয় না। পুরোপুরি ডিজিটাল উপায়ে ঘরে বসে মুঠোফোনেই এ ঋণ পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ। তবে বিকাশের বেশির ভাগ গ্রাহক এই ঋণ পাচ্ছেন না। যে গ্রাহকেরা ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের বিকাশের অ্যাপে দেখানো হচ্ছে, ‘দুঃখিত, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রদানের নীতিমালা অনুযায়ী আপনার বিকাশ হিসাব এখনো ঋণসেবার জন্য উপযুক্ত নয়।’ তাই নতুন ধরনের এ ঋণ পাওয়ার জন্য নিয়মিত বিকাশ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তথ্য সরবরাহ করে (ই-কেওয়াইসি) যেসব গ্রাহক বিকাশের হিসাব খুলেছেন, তাঁরাই শুরুতে সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ঋণ পাচ্ছেন। ই-কেওয়াইসিভুক্ত গ্রাহকের মধ্যে যাঁরা বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করছেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করেন, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরাই অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। ফলে যাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে গ্রাহক হয়েছেন, তাঁরা এখনই ঋণ পাচ্ছেন না। পাশাপাশি যাঁরা অ্যাপ ব্যবহার করছেন না, তাঁরাও ঋণ পাবেন না। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করে যাঁরা গ্রাহক হয়েছেন, শুধু তাঁদেরই ঋণ দেওয়া যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই নিয়মের কারণে বিকাশের অনেক গ্রাহক ঋণ সুবিধা পাচ্ছিলেন না। তাই বিকাশের সব গ্রাহককে যাতে ডিজিটাল ঋণ দেওয়া যায়, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে সিটি ব্যাংক। এতে সায় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়ায় এখন বিকাশের সব গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৯ শতাংশ সুদে সিটি ব্যাংকের ঋণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক, এটা আমরা চাই। বিকাশের গ্রাহকদের ঋণ দিতে প্রয়োজনে সিটি ব্যাংককে পুনঃ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।
সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিকাশের যে ১৫ হাজার গ্রাহক এ পর্যন্ত ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই নিয়মিত ঋণ শোধ করছেন। পাশাপাশি আগে পরীক্ষামূলকভাবে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তা–ও আদায় হচ্ছে।
বিকাশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ নেওয়ার পর কেউ পরিশোধ না করলে তাঁর বিকাশ ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, টাকা জমা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তির টাকা কেটে নেওয়া হবে। তাই কেউ চান না অল্প টাকার জন্য বিকাশের গ্রাহক থেকে বাদ পড়তে।
এদিকে সিটি ব্যাংকের ঋণের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির সঞ্চয়ী আমানতও জমা করা যাচ্ছে বিকাশের মাধ্যমে। বিকাশের গ্রাহকেরা যেমন সিটি ব্যাংকের ঋণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, একই রকম আগ্রহ দেখাচ্ছেন আইডিএলসির সঞ্চয়ী আমানতেও। এ ছাড়া বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, প্রবাসী আয় গ্রহণ, ব্যাংকে টাকা জমা ও ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা আনাসহ নানা আর্থিক সুবিধা মিলছে। বর্তমানে বিকাশের গ্রাহক ৫ কোটি ৭০ লাখ।