‘এই যে সুরমা আঁচলের লাল শাড়িটা দেখছেন, এতে অনেক প্রাচীন একটা মোটিফ আছে। আমার কাছে এক শ বছর আগের একটা নকশিকাঁথা আছে। সেখান থেকে মোটিফের ধারণাটি নিয়েছি।’ এভাবেই নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিলেন খন্দকার আহদুজ্জোহা রুবেল। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা থেকে তিনি ঢাকায় আট দিনব্যাপী জাতীয় এসএমই মেলায় অংশ নিতে এসেছেন।
রাজধানীর শেরবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রের আঙিনায় চলমান জাতীয় এসএমই মেলার চতুর্থ দিন গত বুধবার আহদুজ্জোহা রুবেলের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রাপ্তি ফ্যাশন মেলায় এসেছে নকশিকাঁথা নিয়ে। প্রথম আলোর সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন রুবেলের পরনে ছিল প্যাচওয়ার্কের জ্যাকেট। দেখতে বেশ সুন্দর বটে। নিজ প্রতিষ্ঠানের তৈরি এই পোশাকটার বদৌলতে সহজেই অনেকের নজর পড়ে তাঁর দিকে। রুবেল জানান, শুধু নকশিকাঁথা ও প্যাচওয়ার্কের জ্যাকেটই নয়, তাঁর প্রতিষ্ঠান কুশিকাটার কাজ, গুজরাটি কাজ—এসবও করে থাকে। এমনকি পুরোনো শাড়ি কেটে স্কার্ফ আর ওড়না বানিয়েও খুব ভালো দামে বিক্রি করেন।
তবে এখন সব ছেড়ে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরির ওপর জোর দিতে চান রুবেল। জানান, ইতিমধ্যে যশোরে একটি প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র নিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাসিক বিক্রির পরিমাণ তিন লাখ টাকার ওপরে। নিজের কাজের ওপর বেশ আস্থা আছে রুবেলের। দৃঢ়তার সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে যেদিন মেলা ভেসে গেছে, সেদিনও আমার অনেক বিক্রি হয়েছে।’ কথা বলতে বলতেই দুজন ক্রেতা প্রাপ্তি ফ্যাশনে এসে কিনে নিয়ে গেলেন কিছু পণ্য।
রুবেল বলেন, ‘আমার মা ছিলেন একজন সুচিশিল্পী। এই কাজই ছিল আমাদের পরিবারের জীবিকা। কিন্তু আমরা শুধু তৈরি করতাম, বিক্রি দূরে থাক, সরবরাহকারীদের সঙ্গে পর্যন্ত আমাদের সংযোগ ছিল না। স্কুল পাস করার পর স্কুলের পুরোনো বই–খাতা বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে আমি সরবরাহের কাজ শুরু করি।’
যশোরে ঘরে ঘরে রয়েছে সুচিশিল্পী। নিজের দুই বোনের পাশাপাশি এলাকার আরও তিনজন নারীকে নিয়ে ২০০৩ সালে শুরু করেন পণ্য তৈরির কাজ। শুরুতে পণ্য বিক্রি করতেন একদম নিজেদের পরিচিতজনের মধ্যে। ২০০০ সালের পর থেকে দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর অভিযাত্রা শুরু হলে পণ্য সরবরাহের জন্য ডাক পড়ে রুবেলের মতো তরুণ ব্যবসায়ীদের।
পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে কাজ করার সুবাদেই ঢাকায় আসা-যাওয়া শুরু হয় রুবেলের। একসময় তিনি লক্ষ করলেন যে তাঁদেরই তৈরি পণ্য ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চড়া দামে বিক্রি করে। সে জন্য তিনি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে শুরু করলেন। পাশাপাশি তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন মেলায় যাতায়াত শুরু করেন। এর ফলে তাঁর ব্যবসা বাড়তে থাকে।
রুবেল জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাজের বড় অংশজুড়ে আছে নকশিকাঁথা ও প্যাচওয়ার্কের কাজ। এ জন্য তিনি ঢাকার বেগমবাজার থেকে প্রথমে পুরোনো শাড়ি কিনে নিয়ে প্যাচওয়ার্ক ও কাঁথার কাজ করাতেন। এটি হয় সুতি কাপড়ের ওপর। কিন্তু বেগমবাজারে কাতান, সিল্ক, মসলিনসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ই পাওয়া যায়। তাই তিনি সেগুলোও কাজে লাগানোর কথা ভাবলেন। ব্যস, শুরু করে দিলেন নতুন পণ্য তৈরির কাজ। বেগমবাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের পুরোনো কাপড় কিনে নিয়ে নকশিকাঁথা তৈরির পাশাপাশি স্কার্ফ, শাল বানানোর কাজ শুরু করেন। এতে তাঁর ব্যবসা দিন দিন বাড়ছে। এখন কেবল নিজস্ব ব্র্যান্ড গড়ে তোলার অপেক্ষায় আছেন।