‘তামাক অপরিহার্য পণ্য শুধু মৃত্যুর জন্য’

তামাক অপরিহার্য পণ্য শুধু মৃত্যুর জন্য, জীবনের জন্য নয়। এটি কোনোভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকায় থাকতে পারে না। বরং এটি সংবিধানের বাঁচার অধিকার–সংক্রান্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক ২০২০’ শীর্ষক গবেষণা ফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আজ শনিবার সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।


গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ওয়েবিনারে আজ এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সাবের হোসেন চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।


গবেষণা পরিচালিত হয়েছে বিশ্বের ৫৭টি দেশে। বাংলাদেশে প্রজ্ঞা হচ্ছে গবেষণার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। গবেষণা অনুযায়ী তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সবচেয়ে বেশি।


গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কর্মসূচি প্রধান মো.হাসান শাহরিয়ার। বলা হয়, সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৬৮। আগেরবারের স্কোর ৭৭ থেকে উন্নতি করেছে। তবে বাংলাদেশ এখনো তামাক কোম্পানির শক্তিশালী হস্তক্ষেপ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ, চলমান কোভিড-১৯ মহামারিকে শতভাগ কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে তামাক কোম্পানিগুলো। মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক (সিএসআর) কর্মসূচির অজুহাতে তারা নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনের সঙ্গে মিশে নানাবিধ ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানিগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ব্যবহার করে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানের চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) অনুরোধে এনবিআর জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি, ২০১৯ চূড়ান্তকরণে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আর্টিকেল ৫.৩–এ তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক নীতি প্রণয়নে তামাক কোম্পানিকে কোনোভাবে সম্পৃক্ত না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে নানামুখী চাপ সত্ত্বেও গবেষণা চলার সময় পর্যন্ত জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি, ২০১৯–এর খসড়া প্রণয়নে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যা অত্যন্ত ইতিবাচক।


সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, কোভিডের মধ্যে অনেক তামাক কোম্পানিকে প্রণোদনার টাকা দেওয়া হয়েছে, যা অন্যায্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সাবেক সমন্বয়ক মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করব, স্বাস্থ্য, অর্থ, শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় আর্টিকেল ৫.৩ প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা বিষয়ে সচেতন হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে তামাক ব্যবহার কতটা ভয়ংকর হতে পারে। এটা এমন একটা সমস্যা, যার সমাধানে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয় বরং সকল মন্ত্রণালয় মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’


ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কান্ট্রি উপদেষ্টা মো.শফিকুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার সৈয়দ মাহফুজুল হক, দি ইউনিয়নের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) গ্রান্টস ম্যানেজার এম এ সালাম, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের প্রমুখ।