‘মিডল্যান্ড ব্যাংক সেখানেই যেতে চায়, যেখানে অন্য ব্যাংক নেই। এ জন্য আমরা ব্যাংকের শাখাভর্তি অঞ্চলে যাই না। বিশ্বাস করি, ব্যাংক নেই যেখানে—আমাদের সেবা দেওয়ার সুযোগ বেশি সেখানে। আর সেবাপণ্যের নকশা এমনভাবে করেছি, যাতে গ্রাহকেরা প্রতিটি মুহূর্তের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে পারে। এভাবেই ধীরে ধীরে আমাদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। গ্রাহকদের টাকার নিশ্চয়তা দেওয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব, এরপরই মুনাফা।’
মিডল্যান্ড ব্যাংকের পরিচয় এই কয়েক লাইনে এভাবেই তুলে ধরলেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আহসান-উজ জামান। যাতে ব্যাংকটির সেবা ও মানে বৈচিত্র্য প্রকাশ পায়।
২০১৪ সাল থেকে তিনি ব্যাংকটির এমডি। তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের প্রায় এক দশক এই দেশে। মিডল্যান্ড ব্যাংকের আগে কিছু সময় কাজ করেছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে। এর আগে ছিলেন ব্যাংক অব আমেরিকার, নিউইয়র্ক অফিসে। এএনজেড গ্রিনলেজ ব্যাংকে যোগ দিয়ে প্রায় ১০টি বিদেশি ব্যাংকে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে আহসান-উজ জামানের। আর সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই নতুন প্রজন্মের মিডল্যান্ড ব্যাংককে গড়ে তুলেছেন তিনি।
মূলত ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে জানতেই তাঁর কাছে যাওয়া। খোলামনে তিনি তুলে ধরেন ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা। জানালেন, ‘ব্যাংক চালাতে পরিচালনা পর্ষদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নেই। সেবা দিতে তথ্য প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে চেয়েছি, পেরেছি। হয়তো খুব বড় হতে পারিনি, কিন্তু মানে আপস করিনি।’
সব ব্যাংক যখন শহরে শাখা খুলতে ব্যস্ত, মিডল্যান্ড ব্যাংকের নজর তখন গ্রামের দিকে। সব মিলিয়ে ৩৪টি শাখা রয়েছে ব্যাংকটির। রয়েছে ৫টি উপশাখা এবং ৪৭টি এজেন্ট ব্যাংকিং সেন্টার। আর যে কেউ ঘরে বসেই পাচ্ছেন মিডল্যান্ড ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা।
আহসান-উজ জামান বলেন, ‘নোয়াখালীর সোমপাড়ায় ব্যাংক শাখা করলাম, সবাই অবাক হলো। কারণ, ওখানে শুধু একটি সরকারি ব্যাংক। আমরা বললাম, সেখানেই সুযোগ। যেখানে সব ব্যাংক, সেখানে তো আমরা যাব না।’
গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকটির রয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ সেবা। ঘরে বসেই খোলা যাচ্ছে ডিজিটাল ফিক্সড ডিপোজিট হিসাব, মান্থলি সঞ্চয়ী স্কিম, ই-সেভার হিসাব। প্রবাসীরাও অনলাইনে হিসাব খুলতে পারছেন।
মিডল্যান্ড ব্যাংকের রয়েছে বিস্তৃত অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা। ব্যাংকটি যুক্ত রয়েছে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের সঙ্গে। এর মাধ্যমে যেকোনো মুহূর্তেই অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানো যাচ্ছে।
আহসান-উজ জামান বলেন, ‘আমরা সেবায় সেই ধরনের বৈচিত্র্য আনছি—জীবনের প্রতিটি ক্ষণে প্রয়োজন, এমন সেবার কথা আমরা ভাবি। আর এখন গ্রাহকেরা যাতে ঘরে বসে সব সেবা পান, সেদিকেই আমাদের বেশি মনোযোগ। গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আমরা গর্ব বোধ করি। নতুন নতুন সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের হালনাগাদ করার চেষ্টা করি। একজন গ্রাহক সেবার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখবে, সেই চেষ্টা করি আমরা।’
মিডল্যান্ড ব্যাংকের রয়েছে বিস্তৃত অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা। ব্যাংকটি যুক্ত রয়েছে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের সঙ্গে। এর মাধ্যমে যেকোনো মুহূর্তেই অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানো যাচ্ছে। এমনকি বিকাশ ও রকেটেও টাকা পাঠানো যায়। আবার রকেট হিসাব থেকে ব্যাংকটির হিসাবেও টাকা জমা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের তিনটি ব্যাংক অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ চালু করেছে, তার মধ্যে মিডল্যান্ড একটি। সরকারের এটুআই প্রকল্পের ডিজিটাল সেবা একপের সঙ্গেও যুক্ত ব্যাংকটি। যার মাধ্যমে সব ধরনের পরিষেবা বিল দেওয়া যাচ্ছে। এমন সেবা এখনো অনেক পুরোনো ব্যাংকের নেই। এখন গ্রাহক হিসাব খোলা যাচ্ছে ই-কেওয়াইসি ব্যবহার করেই। ফলে অনেক তথ্যেরও প্রয়োজন পড়ছে না।
গ্রাহকেরাই ব্যাংকের প্রাণ। আমাদের এক লাখেরও বেশি গ্রাহক রয়েছে। আর সব গ্রাহকই সমান গুরুত্বপূর্ণ।মো. আহসান–উজ জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মিডল্যান্ড ব্যাংক
আহসান-উজ জামান এ নিয়ে বলেন, ‘গ্রাহকেরাই ব্যাংকের প্রাণ। আমাদের এক লাখেরও বেশি গ্রাহক রয়েছে। আর সব গ্রাহকই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবার সঙ্গে আমরা যুক্ত। কারণ, এতে কোনো না কোনো গ্রাহকের প্রয়োজন মিটবে। এ জন্য করোনার শুরুতে আমরা গ্রাহকদের ফোন করেছি। কী সেবা প্রয়োজন, তা জানতে চেয়েছি। সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
মিডল্যান্ড শুরু থেকে প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড সহজেই কেনা যাচ্ছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অর্থায়নও করছে ব্যাংকটি। ব্যাংকটি নতুন করে ইসলামি ব্যাংকিং সুবিধা চালু করেছে। শুধু শাখায় নয়, এজেন্ট আউটলেটেও মিলছে ইসলামি ব্যাংকিং সুবিধা। কৃষিঋণের যে লক্ষ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়, তা সফলভাবে অর্জন করেছে ব্যাংকটি। অফসোর ব্যাংকিং সুবিধাও চালু করেছে।
যার যে কাজ, তাকে তা করতে হবে। যে অপারেশনে কাজ করে, তাকে দিয়ে তো মার্কেটিং করলে হবে না।
ব্যাংকগুলোর কর্মীদের নিয়ে আহসান-উজ জামান বলেন, ‘যার যে কাজ, তাকে তা করতে হবে। যে অপারেশনে কাজ করে, তাকে দিয়ে তো মার্কেটিং করলে হবে না। আমরা খরচের ব্যাপারে বেশ সচেতন। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের তুলনায় খরচ অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব তারল্য ব্যবস্থাপনা করা। এরপর মুনাফা। গ্রাহক যেন চাহিবামাত্র টাকা পায়, সব সময় তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে আমরা সফল।’
মিডল্যান্ড ব্যাংকের আমানতের বড় অংশ সাধারণ গ্রাহকদের। আর ঋণের ৮০ শতাংশই করপোরেট খাতে। ব্যাংকটির রয়েছে সব ধরনের ঋণ–পণ্য।
মিডল্যান্ড ব্যাংক গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক হিসাব খোলার সুযোগ মিলছে। ফলে করোনার মধ্যেও ভালো গ্রাহক ও নতুন আমানত পেয়েছে।
করোনায় ব্যাংকের সেবা ও ব্যবসা নিয়ে আহসান-উজ জামান বলেন, ‘সরকারিভাবে বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ না করা পর্যন্ত আমাদের সব শাখা খোলা ছিল। ফলে গ্রাহকেরা পর্যাপ্ত সেবা পেয়েছে। এ কারণে আমানতও কমেনি। করোনার মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়। ফলে নতুন গ্রাহক ও আমানতও আমরা পেয়েছি। তবে ব্যবসা অল্প পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্যাংকটির সব গ্রাহকদের জন্য রয়েছে এটিএম কার্ড ও ফ্রি অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা। ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরুর পর এভাবেই এগিয়ে চলছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।