‘কিছু না করে এমনি এমনি জয়ধ্বনি শোনা যায় না’
শুরুটা করেছিলেন শাড়ি দিয়ে, তাই নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘ছয় গজের গল্প’ বা ‘সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি’। কিন্তু এই স্টোরির ‘পেছনের স্টোরি’ বা গল্পটা মোটেই সহজ ছিল না।
‘পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর বাবা বলেছেন, “এসব কিসের ডিজাইন করছ? বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করো, যেটাতে পড়াশোনা করেছ, সে বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়ো।” তখন বুঝলাম নতুন কিছু শুরু করলে এমন কথা আসবেই। এগুলো সঙ্গে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, কিছু না করে এমনি এমনি জয়ধ্বনি শোনা যায় না।’
নিজের অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি নিয়ে বলছিলেন উদ্যোক্তা লোরা খান। তিনি এই উদ্যোগের শুরুটা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা করার সময়ই।
পড়াশোনা শেষ করে বেশ কিছুদিন চাকরিতেও ছিলেন। যখন দেখলেন একসঙ্গে দুটি চালানো সম্ভব হচ্ছে না, বরং দুটোই খারাপ হচ্ছে, ঝুঁকি নিয়ে শুধু সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরিতেই সময় দেওয়া শুরু করেন। বেশ সুনামের সঙ্গে তাঁর ব্যবসা ধীরে ধীরে বিস্তৃত হলো। তার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা ইট–কাঠের দালানের নকশা বানানোর জন্য আর তাড়া দেয়নি। নিজের স্থাপত্যবিদ্যার পারদর্শিতা কাজে লাগিয়ে শাড়ির সঙ্গে শুরু করেন গয়নারও ডিজাইন করা। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, বালা, চুড়ি, আংটি, নাকফুল, কানের দুল, বিয়ে ও গায়েহলুদে কনের সাজসজ্জার বিভিন্ন রকমের গয়না ইত্যাদি।
লোরা খান বলেন, ‘শুরুতে যখন গয়না ডিজাইন করে মেটাল দিয়ে নির্মাণের জন্য কারিগরের কাছে যেতাম, কারিগরের ইগোতে লাগত। কারণ, তাঁরা রুপা ও স্বর্ণের কাজ করতেন, মেটালের গয়না নির্মাণ করেন না। তারপর আমি তাঁদের বুঝিয়ে রাজি করিয়ে মেটাল দিয়েই বিভিন্ন ফ্যাশনেবল গয়না বানানো শুরু করলাম। এখন বিভিন্ন লাইফস্টাইল ম্যাগাজিনে যখন গয়নার সৌজন্য হিসেবে সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরির নামটা দেখি, অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করে। শুরুর দিকে অনেকেই বিশ্বাসই করতে চাইত না এ ডিজাইনগুলো আমার বানানো।’
শুরুতে অল্প কিছু গয়না বানিয়ে ফেসবুক পেজে দেওয়ার পর দু–তিন দিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। তখনই লোরা বুঝতে পারেন একটু একটু করে তৈরি হচ্ছে তার স্বনির্ভরতার গল্পটি। গ্রাহকদের কাছে ধীরে ধীরে নান্দনিক ডিজাইনের সংমিশ্রণে স্বতন্ত্র নকশার নাম হয়ে ওঠে সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি। শুরুটা ২০১৩ সালে ফেসবুক পেজ দিয়ে হলেও এখন সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরির রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট, অফিস ও জনবল।
স্বনির্ভরতার পাশাপাশি লোরা খান সুযোগ করে দিয়েছেন অনেকের কর্মসংস্থানের। এ ছাড়া অ্যামাজনের মতো বিশ্বের নামীদামি অনলাইন শপেও পাওয়া যায় ‘সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি’র পণ্য। নতুনের আবরণে পুরোনো দিনের গয়নার বাহারি উপস্থাপনই লোরা খানের স্বতন্ত্রতা।
‘আমার স্বপ্ন হচ্ছে, সবাই এক নামে আমার “সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি”কে চিনবে। বিশ্বজুড়ে আমার ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাম ও সংস্কৃতি উপস্থাপিত হবে।’ লোরার এমন স্বপ্নই সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছে। অতীতে তার স্বাক্ষরও রেখেছেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা মা স্বাভাবিকভাবে কিছু মাস বাইরের কাজে জড়িত থাকতে পারেন না। সেই সময়টায়ও যেন ব্যবসার ক্ষতি না হয়, তাই চার মাসের কাজ এক মাসে করে রেখেছিলেন লোরা খান। ইচ্ছা যখন স্বনির্ভর হওয়ার, কোনো পিছুটানই তাঁকে আটকাতে পারেনি সামনে এগিয়ে যেতে।
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে লোরা খানের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হওয়া নারীদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিশেষ ভিডিও চিত্র। প্রথম আলো ডটকম ও শীর্ষস্থানীয় ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিলের যৌথ আয়োজনে ‘DigitAll-এ আত্মনির্ভরশীল’ শিরোনামের ভিডিওগুলো প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।