‘টিকটকে নেতিবাচক মন্তব্যই আমার নিজেকে গড়ার শক্তি!’
‘DigitAll-এ আত্মনির্ভরশীল’ শামীমা আফরিন অমির গল্প
প্রযুক্তির কল্যাণে বিনোদনের খোরাক এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাবিধ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট এখন মানুষের বিনোদনের অন্যতম উৎস। তেমনই একটি প্ল্যাটফর্ম টিকটক। এর মাধ্যমে যেমন সুযোগ আছে আলোচিত হওয়ার, তেমনি সমালোচিত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। টিকটকে বাংলাদেশের একটি আলোচিত নাম শামীমা আফরিন অমি।
২০১৯ সালের শেষের দিকে বন্ধুর পরামর্শে টিকটকে নিজের আইডি খোলেন তিনি। ‘পরাণের পরাণ’ তাঁর প্রথম আলোচিত টিকটক, যা শুরুর দিকে অল্প ফলোয়ার থাকার পরও এক লাখের মতো লাইক পেয়েছিল। বর্তমানে অমির টিকটকে ফলোয়ারের সংখ্যা ১১.৭ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১৭ লাখ। লাইক আছে ৪০৯.৮ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ৯৮ লাখ। বর্তমানে টিকটকের মাধ্যমে মানুষকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি স্বনির্ভরও হয়েছেন তিনি।
মূলত টিকটক থেকে বিভিন্নভাবে টাকা আয় করা যায়, যার মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্র্যান্ড প্রমোশন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্পনসর নিয়ে তাদের ব্র্যান্ড সম্পর্কে ভিডিও বানালে বিনিময়ে মেলে অর্থ। আলোচিত হওয়ার পর টিকটক থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রমোশনের কাজ পেতে শুরু করেন অমি। জীবনের প্রথম আয় ছিল ৫০০ টাকা। বর্তমানে টিকটকের পাশাপাশি তাঁর আয়ের উৎস ফেসবুক ও ইউটিউবও। অমির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবের সফলতার মাধ্যমও ওই টিকটক।
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে শামীমা আফরিন অমির মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হওয়া নারীদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিশেষ ভিডিও চিত্র। প্রথম আলো ডটকম ও শীর্ষস্থানীয় ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিলের যৌথ আয়োজনে ‘DigitAll-এ আত্মনির্ভরশীল’ শিরোনামের ভিডিওগুলো প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
অমির গল্পটা কেমন? শুরুর দিকে অমির এ পথচলাকে সবাই বাঁকা চোখে দেখলেও বর্তমানে তাঁদের অনেকে নিজেরাই সপরিবার টিকটকের বিভিন্ন কনটেন্ট বানাচ্ছেন। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই নাচের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গণে পথচলা অমির। অল্প বয়স হওয়ার কারণে পরিবার থেকে ছিল নানা শঙ্কা, তিনি পারবেন কি না? পড়াশোনার ক্ষতি হবে কি না? তারপরও সবার ধারণাকে পাল্টে দিয়ে পুরস্কারের ক্রেস্ট হাতে যখন বাসায় এসেছিলেন, সেদিন সবাই বুঝতে পেরে অমিকে তাঁর কাজে সহযোগিতা শুরু করেছিলেন। যদিও অমির মা শুরু থেকেই মেয়ের কাজের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন।
‘পরাণের পরাণ’ তাঁর প্রথম আলোচিত টিকটক, যা শুরুর দিকে অল্প ফলোয়ার থাকার পরও এক লাখের মতো লাইক পেয়েছিল। বর্তমানে অমির টিকটকে ফলোয়ারের সংখ্যা ১১.৭ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১৭ লাখ
অমি বলেন, ‘প্রথম প্রথম টিকটক করার সময় আশপাশের সবাই বলত, এসব কী করে মেয়েটা। আমার মা তাদের বলতেন, ও সময় কাটানোর জন্যই এগুলো করছে।’
অমি যে সারা দিনই টিকটিক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তা নয়। দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা টিকটকের পেছনে সময় দেন তিনি। টিকটক করতে গিয়ে অনেক নেতিবাচক মন্তব্যেরও শিকার হয়েছেন অমি।
অমি বলেন, ‘সবাই যে আমাকে ভালো বলবে তেমনটা আশা করি না। কমেন্ট পড়ে কখনো খুশি হই, কখনো কষ্ট পাই, কখনো রাগ লাগে। কিন্তু দিন শেষে আমি ধরেই নিই, যাঁরা নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, তাঁরা আমার ভালো চান বলেই এসব বলছেন। তাই টিকটকে নিজেকে আরও ভালো করার জন্য গাইডলাইন হিসেবে তাঁদের নেতিবাচক মন্তব্যকেই বিবেচনা করি। এটাই আমার শক্তি!’
অমির মতে, বিনোদন মাধ্যমগুলোর ভালো-মন্দ নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। চাইলে টিকটকে বাজে ভিডিওগুলো বাদ দিয়ে ভালো ভিডিও করাও সম্ভব। প্রয়োজন হচ্ছে সদিচ্ছার। নাচ শেখার প্রবল আগ্রহ নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন অমি, কিন্তু অর্থনৈতিক পিছুটানের কারণে সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। বর্তমানে আত্মনির্ভরশীল অমি নাচ নিয়ে সেভাবে কোনো স্বপ্ন না দেখলেও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এখন ভিন্ন—সফল একজন উদ্যোক্তা হওয়া। তাই শুরু করেছেন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পোশাক নিয়ে একটি অনলাইন ব্যবসা, নাম দিয়েছেন ‘অমি ফ্যাশন স্টোরি’। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়া শামীমা আফরিন অমি কারও সহযোগিতা ছাড়া শুধু নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়েই শুরু করেছেন উদ্যোগটি।