আট বছর আগে এক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে হস্তশিল্প পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন জামালপুরের মোছাম্মৎ আফিয়া। শহরের বকুলতলা এলাকায় ছোট একটা দোকান দেন। নাম আফিয়া থ্রি-পিস অ্যান্ড হস্তশিল্প।
আফিয়া এখন নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য নকশিকাঁথা, হাতপাখা, হাতব্যাগ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, মেয়েদের জামা, বিছানার চাদরসহ বিভিন্ন
পণ্য আশপাশের গ্রামের নারীদের দিয়ে তৈরি করান। প্রায় ২০০ জন নারী বাড়িতে বসে সুই-সুতার কাজগুলো করেন। বেচাকেনা ভালো হওয়ায় আফিয়ার ব্যবসার পুঁজি দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ টাকার বেশি।
আফিয়া বলেন, ‘সংসারে সচ্ছলতা আনতে হস্তশিল্প পণ্যের ব্যবসাটি শুরু করেছিলাম। এখন চাকরি ছেড়ে স্বামীও এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। খুব ভালোভাবে আমাদের সংসার চলছে।’
স্বামীর অসুখ হয়েছিল। তাঁর চিকিৎসায় প্রায় ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। এককথায়, এই ব্যবসাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।জয়ন্তী কৈরী, হস্তশিল্প উদ্যোক্তা, জামালপুর
আফিয়া ও তাঁর জন্য পণ্য তৈরি করা প্রায় ২০০ জন নারীর মতো দেশের বিভিন্ন জেলায় গ্রামের নারীদের কাজের ব্যবস্থা হয়েছে হস্তশিল্প পণ্যের ব্যবসার মধ্য দিয়ে। এই সরবরাহব্যবস্থায় কোনো নারী উদ্যোক্তা, কোনো নারী কারিগর, কোনো নারী বিক্রেতা। পুরুষেরাও রয়েছেন। তাঁদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য যেমন রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্রি হয়, তেমনি রপ্তানিও হয়।
বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বাংলাক্রাফট) তথ্য অনুযায়ী, তাদের আওতাধীন হস্তশিল্প পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৪০০। তার মধ্যে নিয়মিত রপ্তানি করে ২৫ থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠান। আর অনিয়মিতভাবে রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০টির মতো। বেশির ভাগই স্থানীয় বাজারমুখী।
জাতীয় শিল্পনীতিতে (২০২২), হস্ত ও কারুশিল্পের সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, কারুশিল্পীর শৈল্পিক মনন ও শ্রমের ব্যাপক ব্যবহার বা বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত মেধা, দক্ষতা ও কলাকৌশলের মাধ্যমে অথবা সৃজনশীল ব্যক্তি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এবং সময়ের পরিবর্তনশীলতাকে সমন্বয় করে নান্দনিক ও ব্যবহারিক যে পণ্য উৎপাদিত হয়।
হস্ত ও কারুশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সুই-সুতার পাশাপাশি বাঁশ, বেত, মাটি, পাট, কাঁসা-পিতল, কাঠ, হোগলাসহ নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি পণ্য, নকশিকাঁথা, হাতে তৈরি তৈজসপত্র, কাঁসা–পিতল ও কাঠের তৈরি ফুলদানি, মোমদানি ও কলমদানি, কাঠের কারুকাজ করা বিভিন্ন পণ্য, ব্যাগ, ঘরকন্নার বিভিন্ন উপকরণ, পোশাক ইত্যাদি নানা কিছু হস্তশিল্পের আওতায় পড়ে।
একসময় এসব পণ্য গ্রামে পারিবারিকভাবে অথবা ছোট কারখানায় তৈরি হতো। এখন মাঝারি আকারের কারখানা গড়ে উঠেছে।