রপ্তানি আয়ের হিসাবপদ্ধতি আধুনিকায়নে সমন্বিত উদ্যোগ

রপ্তানিফাইল ছবি: রয়টার্স

রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিলের তথ্য প্রকাশের পরে হুঁশ ফিরেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)। সংস্থাটি এখন বাণিজ্যসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংকলন ও উপস্থাপনের পদ্ধতি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইপিবি জানায়, এখন থেকে রপ্তানি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তথ্য প্রকাশ করা হবে। এ জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) অনুসরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মতো করে ইপিবি হিসাব কষে পণ্য রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করত। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের সঙ্গে বড় পার্থক্য তৈরি হতো। দেরিতে হলেও বিষয়টি নজরে আসার পর সম্প্রতি রপ্তানির তথ্য সংশোধন করা হয়েছে। তাতে গত দুই অর্থবছরে ২০ মাসে প্রায় ২৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয় হিসাব থেকে এখন উধাও হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইপিবি রপ্তানির ভুল তথ্য প্রকাশ করে আসছিল।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য-উপাত্ত সংকলনের পদ্ধতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আজ সোমবার মতবিনিময় সভা করেছে ইপিবি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ইপিবি কর্মকর্তারা বলেন, রপ্তানির প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। ইপিবি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিবিএসও সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। তবে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিগত ভিন্নতার কারণে তাদের প্রকাশিত তথ্যে গরমিল হয়েছে। এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়নি। এখন আগের রপ্তানি তথ্য সংশোধনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তথ্য প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, বিল অব এক্সপোর্ট বা রপ্তানি পণ্যের চালানের তথ্য শুরুতে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে যায়। এত দিন এই তথ্য রপ্তানি হিসেবে নথিবদ্ধ করা হতো। কিন্তু পণ্য জাহাজীকরণের আগে যেকোনো ঋণপত্র (এলসি) বাতিল হতে পারে। ফলে এখানে একটা পার্থক্য তৈরি হয়। তথ্যের বিভ্রান্তির পেছনে এ রকম আরও কারণ রয়েছে।

বিভ্রান্তি এড়াতে কোন পদ্ধতিতে রপ্তানির হিসাব করা যায়, সেটি নিয়ে সভায় আলোচনা করেন ছয় সংস্থার কর্মকর্তারা। তাঁরা এখন থেকে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের পর তা হিসাব করার পরামর্শ দেন। কর্মকর্তারা বলেন, রপ্তানি হিসাবের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ মানদণ্ড থাকা প্রয়োজন। এটি দেখেই তথ্য-উপাত্ত সংকলন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে রিয়েল টাইম তথ্য বিনিময় ও প্রকাশ করার বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।

বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটকে (বিএফটিআই) রপ্তানি হিসাব করার বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) ও ম্যানুয়াল তৈরি করতে বলেছে ইপিবি। সংস্থাটি জানায়, এসওপির আলোকে তারা রিয়েল টাইম তথ্য প্রকাশ করবে। সব ধরনের রপ্তানি তথ্য নিয়ে প্রতি তিন মাস পর একটি বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করবে ইপিবি।

দেশে টাকার অঙ্কে রপ্তানি তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে মুদ্রার একই ধরনের বিনিময় হার অনুসরণ করা হয় না। সে জন্য বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও একটি সাধারণ মানদণ্ড ঠিক করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সভায়।

সভা শেষে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন সবার উদ্দেশে বলেন, ‘যা হয়েছে হয়েছে। এখন সবাই ওনারশিপটা নেন। সবাইকে এখন একত্রে কাজ করতে হবে।’  

জানতে চাইলে মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানি তথ্যে অসংগতির যেসব কারণ পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে, তা সবই ঠিক আছে। আজকের বৈঠকেও সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ভবিষ্যতে এমন অসংগতি এড়াতে সবাই একটি মানদণ্ড ঠিক করে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। বৈঠকের উদ্দেশ্যও এটাই ছিল। সভার অগ্রগতি নিয়ে চলতি মাসের শেষে আবার বৈঠক হবে।’

এর আগে গত ২৬ জুন একই বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে ইপিবি। ওই সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে এনবিআর প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে গত দুই বছরের রপ্তানি তথ্য সংশোধন করবে ইপিবি; তথ্য সংকলনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ অনুযায়ী অভিন্ন কাস্টমস প্রসিডিউর কোড ব্যবহার করা হবে এবং রপ্তানি তথ্য প্রকাশের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করবে ইপিবি।