ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখলে অর্থনীতিও ভালো থাকে

অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু
ছবি: রয়টার্স

অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু একটি তালিকা টুইট করেছেন। তাতে একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেটা হলো, যেসব দেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বেশি ও সংক্রমণ বেশি হচ্ছে, চলতি বছর সেসব দেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস খারাপ। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও এই সম্পর্ক বেশ দৃশ্যমান।

আইএমএফ বলছে, চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এদিকে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও ওয়ার্ল্ডোমিটার থেকে তথ্য নিয়ে এই টুইট করেছেন কৌশিক বসু। যেসব দেশের নাম দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে চলতি বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে সবচেয়ে বেশি—৩ দশমিক ৮ শতাংশ। আর প্রতি ১০ লাখ মানুষে বাংলাদেশে মৃত্যুর হয়েছে ৩৪ জনের। বাংলাদেশ সরকার কোভিড নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে না পারলেও ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপাদানসহ তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

তবে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ভালো হয়, তার জলজ্যান্ত নজির হচ্ছে চীন। করোনাভাইরাসের উদ্ভব চীনে হলেও তারা সবার আগে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনে। দেশটিতে এখন নতুন সংক্রমণের হার খুবই কম। প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। আইএমএফ বলছে, চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এদিকে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

উন্নত দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ভাইরাস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, দেশ দুটির অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে ২০ শতাংশ, উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভিয়েতনামের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। দেশটি শুরু থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও বিচ্ছিন্নকরণে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ফলে সেখানেও করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেনি। প্রতি ১০ লাখ মানুষে মৃত্যু হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪ জনের। আইএমএফ বলছে, ২০২০ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ।

উন্নত দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ভাইরাস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, দেশ দুটির অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে ২০ শতাংশ, উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। আবার ডেনমার্ক ইংল্যান্ডের মতো কঠোর লকডাউন না করলেও দেশ দুটিতে মৃত্যুহার প্রায় সমান।

ভারতের সংকোচনের পূর্বাভাস হচ্ছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ।
ছবি: রয়টার্স

তালিকায় সবার নিচে আছে ভারত। দেশটির সংকোচনের পূর্বাভাস হচ্ছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। আর দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু হচ্ছে ৮৩ জনের। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশটির অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বড় অর্থনীতি থেকে যেন রাতারাতি সবচেয়ে সংকোচনশীল অর্থনীতিতে পরিণতি হয়েছে ভারত। কৌশিক বসু টুইটে বলেছেন, কয়েক বছর আগে কেউ ভারতের এমন অবস্থার কথা কল্পনাও করতে পারেনি। কোভিড এর একটি কারণ, শুধু একটি কারণ। তাঁর পরামর্শ, সরকারের উচিত হবে তথ্য অস্বীকার না করে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।