ঘুষ দিলে আর কর ছাড় নয়
ঘুষ দিয়ে এখন আর কাজ হাসিল করে নেওয়া যাবে না সুইজারল্যান্ডে। ঘুষের ফাঁকফোকর বন্ধ করার ব্যবস্থা নিচ্ছে দেশটির সরকার। সুইস কোম্পানির পক্ষ থেকে বেসরকারি ব্যক্তিদের দেওয়া ঘুষ অর্থাৎ অপরাধের সুবিধার্থে ব্যয় করা অর্থ আর কর ছাড়যোগ্য হবে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার জানিয়েছে, ঘুষ ছাড়াও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অর্থায়ন বা কোনো অপরাধ সংঘটিত করার বিনিময়ে প্রদত্ত অর্থ ব্যয়ও আইন কার্যকর হওয়ার পর আর করছাড়যোগ্য হবে না।
কর ফাঁকির এক স্বর্গরাজ্য বা করের নিরাপদ আবাস বলে পরিচিত সুইজারল্যান্ড, যাকে বলে ট্যাক্স হেইভেন। তবে এই ভাবমূর্তি আর ধরে রাখতে চাইছে না দেশটি। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এই নতুন বিধি। বহু বছর ধরেই বাইরের নানা গোষ্ঠী এই সংস্কারের কথা বলে আসছিল। এর আগে ২০০১ সালে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদানের ক্ষেত্রে আইনে পরিবর্তন করে দেশটি। ২০১৫ সালে এটিকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এবার বেসরকারি ক্ষেত্রেও তা করা হচ্ছে।
সরকার বলেছে, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) প্রস্তাবকে সমর্থন করে নতুন এই আইন নিয়ে পাঁচ বছর ধরে আলোচনা চলেছে।
১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ওসিইডি বা কাউন্সিল অব ইউরোপ কনভেনশন তার প্রায় অর্ধেক দেশকে বিদেশি পক্ষকে দেওয়া ঘুষের অর্থের ওপর কর না দেওয়ার অনুমতি দেয়। এসব দেশের মধ্যে ছিল জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড। তাদের যুক্তি ছিল, এ জাতীয় অনুশীলন ব্যবসার ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যয়। তবে এর বিপক্ষে দাঁড়ায় ওইসিডির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ওইসিডি অর্থ পাচার এবং ঘুষের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়মের জন্য চাপ দিলে এই অনুশীলন বন্ধ হয়। ওইসিডি বলছে, অনুকূল করের বিধি এ জাতীয় অনুশীলনগুলোকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ২০০১ সালে সুইস কোম্পানি কর্তৃক সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া ঘুষের ক্ষেত্রে কর দেওয়ার নিয়ম করে সুইজারল্যান্ড। পরে গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ট্যাক্স হেইভেনের তালিকা থেকে বাদ দেয়।
কেন সুইজারল্যান্ডকে ট্যাক্স হেইভেন বলা হয়
সুইস ব্যাংকগুলোর বৈশিষ্ট্যই হলো তারা গ্রাহকের যাবতীয় তথ্য গোপন রাখবে, গ্রাহক কোথা থেকে এবং কীভাবে টাকা এনে জমা করছেন, তা নিয়ে মাথা ঘামাবে না বা জানা থাকলেও তা প্রকাশ করবে না। আমানতকারীর পরিচয় কোনোভাবেই প্রকাশ করবে না। যুগের পর যুগ এই আইনসিদ্ধ গোপনীয়তার কারণেই কর ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থ পাচারকারীরা সুইস ব্যাংকগুলোকে বেছে নিয়েছেন। এ কারণে সুইজারল্যান্ডও হয়ে উঠেছে কর ফাঁকির এক স্বর্গরাজ্য।