কোন পথে দাম, ২০২১ সালে কি স্বর্ণ কিনবেন?
এ বছরের ২৭ জুলাই প্রথম ৯ বছরের রেকর্ড ভাঙে স্বর্ণের দাম। সেদিন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (১ আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনার দাম বেড়ে হয় ১ হাজার ৯৪৪ ডলার। এর আগে ২০১১ সালে প্রতি আউন্স সোনার দাম উঠেছিল ১ হাজার ৯২১ ডলারে। এরপর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম, আগস্টে দামে হয় নতুন রেকর্ড। প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর কিছুটা কমতে থাকে দাম। আগস্টের ওই দামের পরে বছরের শেষে এসে এখন পর্যন্ত দাম কমেছে ১৫ শতাংশ।
২০২১ সালে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের ভাবনা
আসলে এই বছরের স্বর্ণের দামের এই হ্রাস-বৃদ্ধি অনেকটাই করোনা ভাইরাসকেন্দ্রিক ছিল। স্বর্ণের দাম আবার কমছে। সেই সঙ্গে করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেরও কোনো সমাধা হয়নি এ বছরে। এ অবস্থায় বছরের শুরুর দিকে হলুদ ধাতু কেনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগে রয়েছেন। আগামী বছরে যাঁরা স্বর্ণ ধরে রেখেছেন, সেই বিনিয়োগকারীরা আসলে কী করবেন? তাঁদের কি স্বর্ণ বিক্রি করে দেওয়া উচিত হবে? নাকি আরও কিনবেন? না যা আছে তা ধরে রাখবেন?
আর্থিক পরিকল্পনাকারীরা বলছেন, নতুন বছরে বিনিয়োগকারীদের সোনার ওপর বরাদ্দ কমতে পারে। কারণ, এ বছরের শেষে দাম কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হতাশ। অধিক লাভের আশায় হয়তো শেয়ারের দিকে ঝুঁকতে পারেন তাঁরা।
ভারতে আর্থিক খাত বিশ্লেষক সুরেশ সদাগোপন ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে এখনই কেউ স্বর্ণ থেকে শেয়ারবাজারে বা শেয়ারবাজার থেকে স্বর্ণ কেনায় যাবেন না। স্বল্পমেয়াদি দামের ওঠানামা নিয়ে চিন্তা না করে একজন ব্যক্তির ৫ থেকে ১০ শতাংশ সোনায় বিনিয়োগ করতে হবে। লোকসানের হিসাব স্বর্ণ ও শেয়ারবাজারে দুটোর ক্ষেত্রে এক নয়। স্বর্ণ মানুষ অন্তত ১৫ বছরের কথা মাথায় রেখে কেনে।
আসলে মার্কিন নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি করোনা বছরজুড়ে স্বর্ণের দাম তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছে। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব বিনিয়োগের চাহিদার ওপর পড়েছে, যা ২০১৯ থেকে ২০২০ সালে দ্বিগুণ হয়েছে।
২০২০ সালটা স্বর্ণের বাজার বেশ চাঙা থাকলেও ২০২১ সালের বিষয়ে এখনই কিছু বলা কঠিন। মার্কিন নির্বাচন এবং এর ফলাফল নিয়ে তৈরি অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের এ বছরের শুরুতে স্বর্ণ কিনতে আগ্রহী করে তুলেছিল। কারণ যেকোনো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মন্দার সময় বিশ্বজুড়ে ‘সেফ হ্যাভেন’ বা নিরাপদ বিনিয়োগ উৎস হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মার্কিন নির্বাচন ছাড়াও করোনাকালে শেয়ার ও মুদ্রাবাজারের অনিশ্চিত পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বর্ণ নিয়ে আগ্রহ বাড়িয়েছে। ফলে বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে। বেড়েছে দাম। তবে বছরের শেষে এসে সেই মার্কিন নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। জো বাইডেন দায়িত্ব নিচ্ছেন, এমনটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় সোনার দাম শেষে এসে কমেছে।
অন্যদিকে গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যাঁরা বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী, যাঁরা সামনের বছরের জন্য পরিকল্পনা করতে চাইছেন, তাঁরা এখন দুটো বিষয়ে ভাবছেন। এক. সোনার দাম পরের বছর আরও একটি রেকর্ড উচ্চতায় যাবে। দুই. নয়তো বিগত কয়েক মাসের মতো কমবে। কারণ আগামী বছরের অর্থনীতি জন্য বড় শঙ্কা কোভিড-১৯।
তাহলে কিনবেন কারা? প্রথমত, স্বর্ণের দামের এ ধরনের হ্রাস ক্রেতাবান্ধব বিষয়। এ রকম দাম কমলে এই বছরের তুলনায় আগামী বছর ক্রেতার চাহিদা বেশি দেখা যাবে। অবশ্য বিশ্লেষকেরা এটাও বলছেন, স্বাস্থ্য সংকট নিয়ন্ত্রণে না এলে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ এই সম্পদের দিকেই ছুটে আসবেন। তখন আবার সোনার দাম বাড়বে। গয়না কিনে যাঁরা রাখেন, সে ধরনের ক্রেতার পক্ষে কেনাটা কঠিন হয়ে পড়বে। সোনার বার বা কয়েন এখন বেশি পছন্দসই মাধ্যম। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে যদি টিকার মাধ্যমে মহামারিটি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তবে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দিকে ঝুঁকবেন। এর অর্থবছরের বাকি সময়ে ক্রেতাবান্ধব সোনার দাম কম হবে।
আসলে মার্কিন নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি করোনা বছরজুড়ে স্বর্ণের দাম তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছে। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব বিনিয়োগের চাহিদার ওপর পড়েছে, যা ২০১৯ থেকে ২০২০ সালে দ্বিগুণ হয়েছে। দাম বৃদ্ধি-হ্রাস সব মিলিয়ে এ বছর আগের বছরের তুলনায় স্বর্ণের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। আগামী বছরের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বছরের প্রথম তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে ২ হাজার ডলারে উঠে যেতে পারে। আরেক দল বিশ্লেষক বলছেন, ২০২১ সালে দাম ঊর্ধ্বমুখী হবে।