ভারতে বড় ও উদ্ভাবনী বাজেট না হওয়ায় হতাশ কৌশিক বসু
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করেছে ভারতের নতুন সরকার। সেই বাজেট মন্দ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। কিন্তু তিনি ১৯৯১ সালের মতো বড় ও উদ্ভাবনী বাজেট প্রত্যাশা করেছিলেন, তা হয়নি। এতে তিনি হতাশ।
ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কৌশিক বসু বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট পরিপাটি। এবারের বাজেটে রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। একসময় তা ৫ শতাংশের ওপরে উঠে গিয়েছিল; এখন তা কমানো হচ্ছে। আগামী অর্থ বছরে তা ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৌশিক বসুর মতে, এটা ভালো। সব পরিসংখ্যান একটি আরেকটির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে; হাওয়া থেকে কোনো পরিসংখ্যান তুলে আনা হয়নি। তিনি এই বিষয়টির প্রশংসা করেছেন।
বাজেট বক্তৃতায় ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের বেশ কিছু কথার প্রশংসা করেছেন কৌশিক বসু, যেমন নারী ও তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কৃষকের কল্যাণ। কিন্তু এর মধ্যে একটা ‘কিন্তু’ এসে যাচ্ছে বলে মনে করেন কৌশিক বসু। বলেন, ভারতের এখন অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক সংকট চলছে।
পর পর দুই বছর ভারতের ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে; এক বছর তা ৮ শতাংশও পেরিয়ে গেছে। কোভিডের পর এই পুনরুদ্ধার হচ্ছে। এ ছাড়া সদ্য প্রকাশিত ভারতের অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনও বেশ ভালো এসেছে। সে জন্য কৌশিক বসু আশা করেছিলেন, বাজেটে তার ভিত্তিতেই প্রণয়ন করা করা হবে।
প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গে কৌশিক বসু বলেন, ওপরের সারিতে যারা আছে, অর্থাৎ উচ্চ আয়ের মানুষ বা করপোরেশনগুলোর আয় বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদের সেভাবে বাড়ছে না। শুধু গরিব নয়, মধ্যবিত্তরাও কঠিন পরিস্থিতির মুখে। এটা হলো ইংরেজি ‘কে’ অক্ষরের মতো পুনরুদ্ধার; একদিকে একটি শ্রেণি ওপরে উঠে যাচ্ছে; আরেক দিকে আরেকটি শ্রেণি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। ভারতের এখন ঠিক সেই সংকট চলছে।
এই বাস্তবতায় কৌশিক বসু বলেন, শুধু জিডিপির দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হবে, সবকিছু ভালো চলছে। ভারতে তরুণদের বেকারত্ব বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ। বৈষম্য অনেক বেড়েছে—এই পরিস্থিতিকে তিনি প্রাক্-স্বাধীনতা পর্বের সঙ্গে তুলনা করেন। তাঁর আশা ছিল, বাজেটে এসব সমস্যা সরাসরি আমলে নেওয়া হবে, কিন্তু তা নেই।
এসব বিষয়ে বাজেটে কিছু বুলি আছে বলে মনে করেন কৌশিক বসু। বলেন, যারা নতুন কাজ শুরু করবে, তাদের শুরুতে কিছুটা প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো হয়তো এমন করবে, যে তারা এই অজুহাতে কর্মীদের বেতন কম দেবে। অর্থাৎ মানুষকে অর্থ দেওয়া হলেও তার সুবিধা করপোরেটদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
কৌশিক বসুর অভিযোগ, মধ্যবিত্ত ও বেকার তরুণদের জন্য এই বাজেটে যথেষ্ট সংস্থান নেই। এ প্রসঙ্গেই তাঁর আশা ছিল, ১৯৯১ সালের মতো বড় ও উদ্ভাবনী বাজেট দেওয়া হবে। যে বাজেট ভারতের গতি-প্রকৃতি ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তাঁর আশা ছিল এই কারণে যে অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনে ইতিবাচক দিক ছিল।
এ ছাড়া এবারের বাজেটে কৌশিক বসু সরকারের বিশেষ এজেন্ডা দেখছেন না বলে জানিয়েছেন। ওপরের দিক থেকে বিষয়টি ভালোই লাগে; কিন্তু ভেতরটা তেমন নয়। সমগ্রটা দেখা যাচ্ছে কিন্তু নিচেরটা নয়। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে ভারত এক সময় বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ে থাকলেও এখন তার মান অনেকটা পড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কৌশিক বসু বলেন, ‘কর্মসংস্থান শব্দটা মাথায় রাখতে হবে; এটা দুই রকম। কেউ চাকরি পেয়ে মাসে মাসে বেতন পাচ্ছে—এটা একধরনের কর্মসংস্থান। যাঁরা ব্যবসা করছেন; তাঁদেরও আরেকভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে। আবার যাঁরা কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে রাস্তায় এটা-ওটা বিক্রি করছে, তাঁদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে এই শ্রেণির মানুষও আছেন যাঁরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় ঝুড়ি নিয়ে বসছেন।’
যে বিষয়টি তাঁকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে বলে উল্লেখ করেন কৌশিক বসু, তা হলো এই সময়ে সবচেয়ে মেধাবী মানুষদের নিয়ে উদ্ভাবনী নীতি প্রণয়ন না করা, যা একসময় হতো। সেই সঙ্গে উদ্ভাবনী নীতি প্রণয়নে ভারতের যে বৈশ্বিক সুনাম ছিল, তা ক্ষুণ্ন হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
মঙ্গলবার তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার কোটি রুপির বাজেট দিয়েছেন।