২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ইসরায়েলে কর্মরত বিদেশি কোম্পানি কারা, এখন কী করছে

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর সেখানে কর্মরত বিদেশি কোম্পানিগুলো কার্যক্রম গুটিয়ে আনছে

ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি হামাস বাহিনীর হামলার পর সে দেশে কর্মরত বিদেশি কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়েছে। অনেক কোম্পানি ইতিমধ্যে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং অনেক কোম্পানি কর্মীদের ঘরে থেকে কাজ করতে বলেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তৈরি করা তালিকায় দেখে নেওয়া যাক কোন কোম্পানি ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে—

ভ্রমণ

বেশ কিছু এশীয়, ইউরোপীয় ও মার্কিন বিমান সংস্থা তেল আবিবে সরাসরি বিমান পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে।

ডেলটা এয়ারলাইনস ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তেল আবিবে বিমান পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বিমান সংস্থা এল আল জানিয়েছে, তারা বরং ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়াবে। ইসরায়েলের রিজার্ভ সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে তাদের এই উদ্যোগ। এই রিজার্ভ সৈন্যদের নিয়ে ইসরায়েল ইতিহাসের অন্যতম বড় সৈন্যসমাবেশ ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এল আল ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা।

রয়্যাল ক্যারিবিয়ান বলেছে, তারা তাদের পর্যটকবাহী জাহাজ পরিচালনায় কিছু পরিবর্তন এনেছে এবং সেই পরিবর্তনের তথ্য ভ্রমণকারীদের সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কার্নিভ্যাল ক্রুজ লাইনার বলেছে, তারাও তাদের জাহাজ পরিচালনায় পরিবর্তন এনেছে এবং এই মুহূর্তে তারা ইসরায়েলের বন্দরে ভিড়ছে না। নরওয়েজীয় ক্রুজ লাইন হোল্ডিংস অক্টোবর মাসে ইসরায়েলগামী জাহাজের সূচিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে এবং জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

এ ছাড়া ইন্টারকনটিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ জানিয়েছে, ইসরায়েলের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি হোটেলের চারপাশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

সিক্স সেনসেস শাহারুত ও হোটেল ইনডিগো তেল আবিব ডায়মন্ড ডিস্ট্রিক্ট জানিয়েছে যে তারা সাময়িকভাবে তাদের সেবা বন্ধ রাখছে। কিন্তু ইসরায়েলে তাদের অন্যান্য হোটেল খোলা রয়েছে এবং কার্যক্রম চলছে।

আরও পড়ুন

তেল কোম্পানি

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেভরনকে ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রণালয় উত্তরাঞ্চলের তামার প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

ব্যাংক

জেপি মর্গান চেজ ইসরায়েলে তাদের দুই শতাধিক কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানে—এমন একটি সূত্র রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছে। এই ওয়ালস্ট্রিট ব্যাংক ইসরায়েলে কার্যক্রম চালায়।
গোল্ডম্যান স্যাকস তাদের তেল আবিব কার্যালয়ের কর্মীদের ঘরে থেকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে।

ব্যাংক অব আমেরিকার তেল আবিব কার্যালয় কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। কোম্পানিটির এক অভ্যন্তরীণ মেমো রয়টার্সের হাতে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তারা ইসরায়েলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

ম্যর্গান স্ট্যানলিও একই পথে হাঁটছে; নিকট ভবিষ্যতে কর্মীদের কার্যালয়ে আসতে বারণ করে দিয়েছে তারা। আপাতত কর্মীরা ঘরে থেকে কাজ করবেন বলে জানিয়েছ ব্লুমবার্গ নিউজ।

ইসরায়েলের যেসব বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে সিটি গ্রুপ। তারা অবশ্য কর্মীদের জন্য বাধাধরা নিয়ম করেনি। সিটি গ্রুপ কর্মীদের বলেছে, তাঁরা চাইলে কার্যালয় এসে যেমন কাজ করতে পারেন, তেমনি ঘরে থেকেও কাজ করতে পারেন।

ব্যাংক অব আমেরিকার তেল আবিব কার্যালয় সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে—এক অভ্যন্তরীণ মেমোতে প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের এ তথ্য জানানো হয়েছে।

লজিস্টিকস

ভারতীয় কোটিপতি গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি পোর্টস উত্তর ইসরায়েলে হাইফা বন্দর পরিচালনা করে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, বন্দরের কার্যক্রম চলছে। তবে তারা এ–ও বলছে যে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে ব্যবসা চালানো জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেডএক্স একটি বৈশ্বিক ডেলিভারি কোম্পানি। তবে হামাসের হামলার পর তারা ইসরায়েলে তাদের সেবা বন্ধ রেখেছে।

ইউপিএস বিশ্বের সবচেয়ে বড় পার্সেল ডেলিভারি কোম্পানি। তারা জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইসরায়েল থেকে ও ইসরায়েলমুখী সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। সেবা বিঘ্নিত হতে পারে—এ কথা জানিয়ে কোম্পানিটি বলেছে, যেসব পণ্য ইসরায়েলে রয়েছে, সেগুলো গন্তব্যে পাঠাতে তাদের একটি জরুরি পরিকল্পনা রয়েছে। নিরাপদে যদি এসব পণ্য গন্তব্যে পাঠানে যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব তারা তা করবে।

প্রযুক্তি

ইসরায়েলে বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানির কার্যালয় আছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম চিপ কোম্পানি এনভিডিয়া। আগামী সপ্তাহে তেল আবিবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক সম্মেলন করার কথা ছিল তাদের। এ পরিস্থিতিতে তারা সেই সম্মেলন বাতিল করেছে। প্রধান নির্বাহী ইয়েনসেন হুয়াংয়ের সেখানে বক্তব্য রাখার কথা ছিল।

খুচরা বিক্রয়

পোশাকের খুচরা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএমের স্থানীয় অংশীদার ইসরায়েলে সব দোকান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
ইন্ডিটেক্স এসএ মালিকানাধীন জারা একই পথ অনুসরণ করে ইসরায়েলে তাদের ৮৪টি দোকান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এসব স্টোর স্থানীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়। ইসরায়েলে জারার ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘আমাদের স্টোরগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। স্টোর খোলার ৩০ দিনের মধ্যে কোনো পণ্য ফেরত দেওয়া যাবে।’

ডেকালথন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলাধুলাসামগ্রীর বিক্রেতা। তাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক ব্যানারে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তার কারণে পণ্য ডেলিভারি দিতে দেরি হতে পারে। আসুন, আমরা শান্ত সময়ের প্রত্যাশা করি।’

ওষুধ কোম্পানি

ওষুধ কোম্পানিগুলোর পরিস্থিতি ভিন্ন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা খুচরা দোকান চাইলেই বন্ধ করে দেওয়া যায়, কিন্তু ওষুধ কোম্পানির কার্যক্রম যুদ্ধের মধ্যে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। এ পরিস্থিতিতে এলি লিলি অ্যান্ড কোম্পানি জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে তারা কাজ করে যাচ্ছে।

বিশ্বের বৃহত্তম জেনেরিক ওষুধ কোম্পানি টেভা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন কার্যক্রমে তেমন প্রভাব পড়েনি, তবে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের উৎপাদন চালিয়ে যেতে তাদের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।

আরও পড়ুন

যুদ্ধের কারণে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে কিংবা আর্থিক ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই কোম্পানিটি মনে করছে।

টেভা সারা বিশ্বে ওষুধ বিক্রি থেকে যত আয় করে, তার মাত্র ২ শতাংশ আসে ইসরায়েল থেকে। অন্যদিকে, ডলারের হিসেবে ইসরায়েলে তাদের উৎপাদন মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের ৮ শতাংশেরও কম।
য়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ব্রিস্টল-মায়ার্স স্কুইব জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ওই অঞ্চলের রোগীদের জন্য ওষুধ সরবরাহ করে যাচ্ছে।