শ্রীলঙ্কায় আবার অর্থায়ন করছে জাপান, ৫ বছরে দেবে ১১০ বিলিয়ন ডলার

ফাইল ছবি: এএফপি

ঋণ পুনর্গঠনের সুফল পেতে শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। সম্প্রতি জাপান বলেছে, শ্রীলঙ্কা ঋণখেলাপি হওয়ার আগে যেসব প্রকল্পে তারা অর্থায়ন শুরু করেছিল, সেগুলোয় তারা আবার অর্থ দিতে শুরু করবে। এর মধ্যে আছে কলম্বোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প।

রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা যখন বিদেশি ঋণ পরিশোধে খেলাপ করে, তখন জাপানসহ সব দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা দেশ চলমান প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। তখন শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৬ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার।

শ্রীলঙ্কা সম্প্রতি ঋণ পুনর্গঠনের পর জাপান প্রথম দেশ হিসেবে স্থগিত প্রকল্পে আবার অর্থায়নের ঘোষণা দিল। শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত মিজুকোশি হিদেয়াকি গতকাল বুধবার এই ঘোষণা দেন।

জানা গেছে, এর মধ্য দিয়ে জাপান মোট ১১টি প্রকল্প পুনরায় অর্থায়ন করবে এবং আগামী ৫ বছরে জাপান মোট ১১০ বিলিয়ন বা ১১ হাজার কোটি ডলার অর্থায়ন করবে। শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা অজিত আবেসেকারা এ কথা বলেন।

সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কা এসব প্রকল্পে পুনরায় শুরু করার বিষয়ে জাপানের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা শুরু করে। এরপর দেশটি সম্প্রতি ঋণ পুনর্গঠনে সক্ষম হওয়ার পর জাপান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল।

গত জুন মাসে জাপান, চীন ও ভারতের মতো দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা দেশগুলো শ্রীলঙ্কার এক হাজার কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠনে সম্মত হয়। এর মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কা ঋণ পরিশোধে আরও চার বছর সময় পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৫০০ কোটি ডলার বাঁচাতে পারবে, যা দেশের উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে।

জাপানের এই অর্থায়নের মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণসহ যেসব প্রকল্প পুনরায় চালু হবে, সেগুলো হলো পানি পরিশোধন, স্বাস্থ্যসেবা ও বেশ কিছু অবকাঠামোগত প্রকল্প।

এদিকে দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের পাশাপাশি বন্ডদাতাদের সঙ্গেও ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে আলাপ শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে যে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে, তার তৃতীয় পর্যালোচনার আগে ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়টি সম্পন্ন করতে হবে।

গত বছর আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২৯০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ।

২০২২ সালে ভয়াবহ ঋণসংকটে পতিত হয় শ্রীলঙ্কা। বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় কলম্বো খেলাপি হয়ে যায়। তখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দেশটি। মূল্যস্ফীতি আকাশ স্পর্শ করে; জ্বালানির সংকটে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দেখা দেয় খাদ্যসংকট। এমন এক পরিস্থিতিতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালিয়ে যান। দেশটির বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্টের বাসভবনেও হামলা চালায়।

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়; ২০২৩ সালেও সংকোচন হয়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এবার তারা সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার পথে।