নতুন বছর ও প্রত্যাশা
নিবন্ধিত করদাতা এ বছর এক কোটি ছাড়াবে
গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে দেশে ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৪ জন টিআইএনধারী আছেন। এ বছরে তা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
ভুটানের জনসংখ্যা ৭ লাখ ৫৪ হাজার। দেশটিতে প্রায় ৮৮ হাজার করদাতা আছেন।
নেপালের জনসংখ্যা ২ কোটি ৮০ লাখ। সেখানে ৩০ লাখ করদাতা কর দেন।
শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা ২ কোটি ১৬ লাখ। সেখানে কর দেন প্রায় ১৬ লাখ মানুষ।
নতুন বছরে নতুন সুখবর প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চলতি বছরে এই প্রথম দেশের নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
বর্তমানে দেশের মোট কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা এক কোটি ছাড়ালে আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়ে যাবে বাংলাদেশ। ভারতের পর দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নিবন্ধিত করদাতার দেশ হবে বাংলাদেশ। বাস্তবতা হলো বছর শেষে আয়-ব্যয়ের খবর জানিয়ে রিটার্ন জমা দেন টিআইএনধারীদের মোট তিন ভাগের এক ভাগ; যদিও নানাভাবে উৎসে আয়কর কেটে রাখা হয় বেশির ভাগ নিবন্ধিত করদাতার কাছ থেকে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে দেশে ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৪ জন টিআইএনধারী আছেন। গত ছয় বছরে সাড়ে ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে টিআইএন নিয়েছেন। প্রতিবছর গড়ে ১১ লাখের মতো করদাতা টিআইএন নিচ্ছেন।
টিআইএন দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী রিটার্ন জমা পড়ছে না। কেন রিটার্ন জমা পড়ছে না, তা জানতে এনবিআরকে জবাবদিহির পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার।মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর
এনবিআরের কর বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, আগামী এক বছরে নতুন করে ১৮ লাখ নতুন করদাতা নিবন্ধন নেবেন। আর তাতে এ বছরেই টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। টিআইএনধারীদের বার্ষিক রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।
জানা গেছে, টিআইএন নিতে উদ্বুদ্ধ করতে এনবিআর নানা উদ্যোগ নিয়েছে। জরিপ করার পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করদাতা খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের করযোগ্য সদস্যদের টিআইএন নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে কর বিভাগ।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিআইএনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী রিটার্ন জমা পড়ছে না। কেন রিটার্ন জমা পড়ছে না, তা জানতে এনবিআরের জবাবদিহির পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, এক কোটির মতো টিআইএন আছে। তারা পুষ্টিকর করদাতা নয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মীদের টিআইএন খুলতে বলা হয়েছে। বছর শেষে তাঁদের অনেকেই শূন্য রিটার্ন দিচ্ছেন। এতে কার্যকর করদাতার সংখ্যা বাড়ছে না।
দক্ষিণ এশিয়ায় কার কত করদাতা
জনসংখ্যার অনুপাতে নিবন্ধিত করদাতার অনুপাত বাংলাদেশে বেশ কম। মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ কর নিবন্ধন নিয়েছেন। বার্ষিক রিটার্ন দেন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা বেশ ভালো।
জনসংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে বেশি কর দেন ভুটানের নাগরিকেরা। ভুটানের জনসংখ্যা ৭ লাখ ৫৪ হাজার। দেশটিতে প্রায় ৮৮ হাজার করদাতা আছেন। জনসংখ্যার ১১ শতাংশের বেশি প্রত্যক্ষ করের আওতায় আছেন। নেপালের জনসংখ্যা ২ কোটি ৮০ লাখ। সেখানে ৩০ লাখ করদাতা কর দেন। মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ নাগরিক করের আওতায় আছেন।
শ্রীলঙ্কার অবস্থাও তুলনামূলক ভালো। ২ কোটি ১৬ লাখ জনসংখ্যার এই দ্বীপদেশটিতে ৭ শতাংশের বেশি মানুষ কর দেন। দেশটির নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। অন্যদিকে ভারতে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ১ কোটি ৪৬ লাখ। বাংলাদেশের ওপরে শুধু ভারতের অবস্থান। চলতি বছরে যদি এ নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কোটি করদাতার দেশ হবে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়ার অপর দুটি দেশ মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানে ব্যক্তিশ্রেণির করকাঠামো সুদৃঢ় নয়। ওই দুটি দেশে কত লোক কর দেন, তা জানা যায়নি।
প্রতিযোগী ১০ দেশের মধ্যে দশম
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় একটি নীতি বিবৃতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ১০ দেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দেখা গেছে, ওই তালিকার ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। এটা রাজস্ব খাতে বড় সংস্কার না হওয়ার ফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মানুষেরা।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বেরোতে অভ্যন্তরীণ খাতের সম্পদে বেশি ভরসা করতে হবে। ওই তালিকায় থাকা নেপাল ও লাওস বাংলাদেশের সঙ্গে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বেরোবে। নেপাল ও লাওসের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত যথাক্রমে ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ অনুপাত মাত্র ১০ শতাংশ।
তালিকার অন্য দেশগুলো হলো শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ভারত, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। এ দেশগুলোর রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ।
বিশ্লেষকেরা বলেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত যেমন ১০ শতাংশ, তেমনি আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকারও ১১ শতাংশ। অর্থাৎ কর-জিডিপি অনুপাত প্রকৃত অর্থে অানুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকারের সঙ্গে ধারাবাহিক। কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হলে দেশের আনুষ্ঠানিক খাত বড় করতে হবে।
মাসিক ছুটি, স্বাস্থ্য ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ইত্যাদি স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী চুক্তিপত্রসহ নিয়োগ দেওয়া হলে এবং যখন-তখন ছাঁটাইয়ের অমানবিক প্রথা বন্ধ হলে কর্ম সুরক্ষা আরও দৃঢ় হবে, তখন রাজস্ব বা কর সংগ্রহ বাড়বে।