ডলারের তেজ কমেছে ফেডের সিদ্ধান্তের আগেই, কত দিন এই পরিস্থিতি থাকবে
ফেডারেল রিজার্ভের নীতিসুদ হ্রাসের সময় এগিয়ে আসছে। এর মধ্যেই বিশ্বের প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের দর এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। তবে ডলার শিগগিরই আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার সাপেক্ষে যে ইউএস ডলার ইনডেক্স প্রণয়ন করা হয়, সেই সূচকের মান গত আগস্ট মাসের প্রথম দিকের তুলনায় ৩ শতাংশ কমেছে। পরিণামে এই মুদ্রার মান এখন এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বিশ্ববাজারে মার্কিন ডলারের দর মূলত দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত, ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার এবং দ্বিতীয়ত, মার্কিন অর্থনীতির স্বাস্থ্য। গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে কমায় আশা করা হচ্ছে, আজ বুধবার ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে নীতি সুদহার কমানো হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডলারের বিনিময় হার কমছে।
ডলারের ওপর চাপ বৃদ্ধির আরও কারণ হলো বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, প্রথম ধাপেই ফেডারেল রিজার্ভ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে নীতিসুদ কমাবে। যদিও আগে ধারণা করা হয়েছিল, নীতি সুদহার প্রথাগতভাবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে কমানো হবে। বর্তমানে ফেডের নীতি সুদহার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে—যা গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রার বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণেও ডলারের বিনিময় হার কমেছে বলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসের পর জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দর এখন সর্বোচ্চ। জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দরবৃদ্ধির কারণ হলো দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপরীতমুখী অবস্থান। ফেডারেল রিজার্ভ যেখানে নীতিসুদ কমাতে যাচ্ছে, সেখানে ব্যাংক অব জাপান ইতিমধ্যে নীতিসুদ বাড়াতে শুরু করেছে।
এদিকে ডলারের বিনিময় হার কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে চাঙা ভাব দেখা যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনের হিসাবে দেশটির শেয়ারবাজারের অন্যতম সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর রেকর্ড উত্থান হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, সে দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে ভিন্নমত আছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার মূলত মার্কিন অর্থনীতির ওপর নির্ভর করছে। চীন ও ইউরোপের অর্থনীতি নিম্নমুখী হলেও ডলারের ওপর তার প্রভাব সেভাবে পড়ছে না। অন্যান্য দেশের অর্থনীতির ধীরগতির কারণে বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে পারেন। অর্থাৎ নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ডলারভিত্তিক মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অত ভালো অবস্থানে না থাকলেও এর অর্থ এই নয় যে বিনিয়োগের জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আছে। চীন ও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতির অধোগতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিনিয়োগের উত্তম জায়গা।
বিনিয়োগ কৌশলবিদেরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি জাপান বা চীনের মতো রপ্তানিমুখী নয়। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কোম্পানি আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যবসা করে, ডলারের বিনিময় হার হ্রাস তাদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শিগগিরই ডলারের বিনিময় হার আবার বাড়তে পারে।
ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ‘ডলার স্মাইল’ নামের এক তত্ত্ব আছে। মার্কিন অর্থনীতি যখন ভালো করে বা বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন নিম্নমুখী থাকে—এই উভয় ক্ষেত্রেই ডলার শক্তিশালী হয়। বৈশ্বিক অর্থনীতি গতি হারালে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ডলারভিত্তিক বন্ডে বিনিয়োগ করা নিরাপদ বোধ করেন।
এখন উভয় পরিস্থিতিই বিরাজ করছে। বিশ্ব অর্থনীতির তুলনায় মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী। আগস্ট মাসে দেশটির মানুষের ভোক্তা ব্যয় অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। আটালান্টা ফেডের এক জিডিপি ট্র্যাকার বলছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। শুধু শ্রমবাজারেই কিছুটা দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। তা–ও সেটা খুব বড় কিছু নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।