ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে

মূল্যস্ফীতি

জুন মাসে ভারতের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির এই উচ্চ হারের কারণে গত মাসে ভারতের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি আবার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। চার মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতির এই হার সবচেয়ে বেশি। জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন মাসে ভারতের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং গত মে মাসে ছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৩ ভিত্তি পয়েন্ট।

জুন মাসে ভারতের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ; আগের অর্থাৎ মে মাসে এই মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের জুন মাসে তা ছিল ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে তাপপ্রবাহের প্রভাব আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ভারতে খাদ্যের মধ্যে সবজির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গত মাসে সবজির দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ডালের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। প্রধান খাবার অর্থাৎ চাল-গমের মতো সব খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশের ওপরে। কেবল ভোজ্যতেল ও চর্বি বাদে দাম বেড়েছে প্রায় সব রকম খাবারেরই। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ৮ শতাংশের ওপরে।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুর্ভোগ যে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পিছু ছাড়েনি, এই পরিসংখ্যানে সেই চিত্রই পরিষ্কার হলো। গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের সিংহভাগ ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে; খাদ্যের এই মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়; অনাবৃষ্টির কারণে ফলন মার খাওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। এই হার না কমলে কেউ স্বস্তি পাবেন না। ফলে আরবিআই সুদ কমাতে আরও বেশ কিছুটা সময় নেবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।

বর্ষায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। ইতিমধ্যে অতিবৃষ্টিতে ভারতের অনেক অনেক অঞ্চলই সমস্যায় রয়েছে। সে কারণে খারিফ (জুন–নভেম্বর মাসে উৎপাদিত) ফসল উৎপাদনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে মজুতের ওপর নজরদারি চালাতে হবে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
এ বছর গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহে যে খাদ্যের দাম বেড়ে যাবে—এমন আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। সেই আশঙ্কা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। ফলে চলতি বছর ভারতের প্রবৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়তে বলেই আশঙ্কা।

ভারতের নীতি সুদহার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ ও বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছিলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিগগিরই নীতি সুদ কমানোর পথে হাঁটবে। এমনকি মুদ্রানীতি কমিটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক–বহির্ভূত সদস্যদের মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হচ্ছিল যে উচ্চ নীতি সুদহারের কারণে প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।

আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বৃহস্পতিবার বলেন, মূল্যস্ফীতির হার ধীরে ধীরে ৪ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার দিকে নেমে আসছে। তবে এখনই নীতি সুদ কমানোর সময় হয়নি। এরপর জানা গেল, জুন মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে।

সুদ না কমলে শিল্পের বিনিয়োগ বাড়বে না। অর্থাৎ মোদি সরকারের নতুন এই জমানায়ও মূল্যস্ফীতি একরকম গলার কাঁটা হয়ে আছে। কীভাবে সেই কাঁটা তোলা হবে, অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি অনেকটা তার ওপর নির্ভর করবে।