ভ্রমণ মৌসুমে ক্ষতির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থাগুলো
যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে ভ্রমণের মৌসুম। এ সময় দেশটির বিভিন্ন বিমানবন্দর দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ চলাচল করবে। এ খবরে অনেকে হয়তো মনে করবেন, এখন বিমান সংস্থাগুলোর রমরমা ব্যবসা হবে। কিন্তু বাস্তবতা তেমন নয়।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, বিমান সংস্থাগুলো এখন নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখে আছে, যেমন জ্বালানি তেল, শ্রমিকের মজুরি ও সুদহার বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে বোয়িংয়ের বিভিন্ন মডেলের বিমানে ত্রুটি থাকায় বিমান সংস্থাগুলোর পক্ষে সব পথে বিমান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ বাস্তবতায় বিমানের টিকিট আগাম বিক্রিতে চাপ থাকলেও তা দিয়ে বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতিতে অবশ্য যাত্রীদের ওপর বিশেষ চাপ হবে না। বিমানের টিকিটের দাম নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের ওপর, অর্থাৎ কত মানুষ ভ্রমণ করছেন এবং তাঁদের জন্য কী পরিমাণ বিমান প্রস্তুত আছে, তার ওপর। বিমান পরিচালনায় প্রকৃত অর্থে কত ব্যয় হচ্ছে, তার ওপর বিমানের টিকিটের দাম নির্ভর করে না।
কিন্তু এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে শেষবিচারে যাত্রীদের জন্য ভালো হবে না। বিমান চলাচলের পথ আরও কমে আসবে। এতে যাত্রীদের সুযোগ কমে আসবে এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতার মান পড়ে যাবে।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিমান সংস্থাগুলোর মুনাফা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সময় বিমান সংস্থাগুলোর মুনাফা ২০০ কোটি ডলার কমবে। বছরের প্রথম প্রান্তিকেও তারা মুনাফা করেছে, তা নয়; বরং প্রথম প্রান্তিকে তাদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি ডলার।
বিমান সংস্থাগুলোর সবচেয়ে বড় ব্যয়ের জায়গা হলো কর্মীদের বেতন ও জ্বালানি খরচ। এই দুইয়ের জন্য ব্যয় চলতি বছরের শুরু থেকেই বেশি। গত কয়েক বছর মজুরি স্থির থাকার পর সম্প্রতি পাইলটদের বেতন বৃদ্ধি হয়েছে দুই অঙ্কের ঘরে; এখন বিমানের অন্য কর্মীরাও একই হারে বেতন বৃদ্ধির দাবি করছেন।
গ্রীষ্মকাল পশ্চিমা দেশগুলোর ভ্রমণের মৌসুম। এ সময় এমনিতেই বিমানের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম বাড়ে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেট ফুয়েল মনিটর অনুসারে, গত সপ্তাহে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং গত মাসে বেড়েছে ৪ শতাংশ।
বিমান সংস্থাগুলোর সমস্যার অন্যতম কারণ হলো বোয়িংয়ের বিমানের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা। বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও এয়ারবাসের কিছু বিমানের ইঞ্জিনেও যে সমস্যা হয়েছে, সেই বিষয় অতটা আলোচিত নয়।
চলতি বছরের শুরুতে আলাস্কা এয়ারলাইনসের ৭৩৭-৯ বোয়িং মডেলের বিমানের দরজা মাঝ আকাশে খুলে গেলে ব্যাপক হইচই হয়। তখন আলাস্কা এয়ারলাইনসের ১৪৫টি বোয়িং ৭৩৭ বিমান ছিল। এর ফলে বোয়িংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করায় শেষমেশ ওই মডেলের বিমানগুলো সাময়িকভাবে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় আলাস্কা এয়ারলাইনস। অন্যান্য বিমান সংস্থার ওপরও এর চাপ পড়ে।
সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি বিমানের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে বোয়িংয়ের উৎপাদন সীমিত করে দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বিমান সংস্থাগুলোর পরিকল্পনায়ও পরিবর্তন এসেছে। তাদের সম্প্রসারণ ও পুরোনো বিমানের বদলে নতুন বিমান কেনার যে পরিকল্পনা ছিল, সেই পরিকল্পনায় নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। কিছু কিছু বিমান সংস্থা পাইলটদের বিনা বেতনে ছুটি দিয়েছে। সাউথওয়েস্ট ও ইউনাইটেডের মতো বিমান সংস্থা পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে।
এদিকে বোয়িংয়ের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি এয়ারবাসের সমস্যা। ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে এয়ারবাস এ ২২০ ও এ ৩২০ মডেলের বিমানগুলো বসিয়ে রাখা হয়েছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে এ পরিস্থিতি চলছে। যে মডেলের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা গেছে, সেই মডেলের ইঞ্জিনসংবলিত সব বিমান অন্তত কিছুদিনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরবরাহের সমস্যার কারণে চলতি বছর এয়ারবাসের উৎপাদনও কমে যাবে।
ভাড়া কমেছে
এ পরিস্থিতিতে বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে বড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিমানের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা সত্ত্বেও ২০২৩ সালের জুলাই মাসের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই মাসে বিমান সংস্থাগুলোতে ৬ শতাংশ অতিরিক্ত আসন আছে বলে জানিয়েছে বিমান পরিচালনাবিষয়ক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সিরিয়াম। এতে বিমানের ভাড়া কমেছে, কিন্তু বিপদে পড়েছে বিমান সংস্থাগুলো। তাদের মুনাফা কমছে।
এদিকে সাউথইস্ট এয়ারলাইনস খরচ কমানোর জন্য বলেছে, চারটি বিমানবন্দর তারা ব্যবহার করবে না।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, ভুঁইফোড় বিমান সংস্থাগুলো টিকিটের দাম কমাচ্ছে ঠিকই, তবে এভাবে ছাড় দিয়ে তারা বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।