ভারতে কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) বেকারত্বের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ ও নতুন বিনিয়োগ, এসব নিয়েও আছে অস্বস্তি। এই পরিস্থিতিতে নতুন সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটের আগে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রিজার্ভ ব্যাংকের নতুন পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ভারতে ৪ কোটি ৭০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চের শেষে সে দেশে কর্মরত মানুষের সংখ্যা ছিল ৫৯ কোটি ৬৭ লাখ। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের শেষে তা বেড়ে ৬৪ কোটি ৩৩ লাখে উঠেছে। অর্থাৎ এক বছরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ছিল ৬, যদিও এক বছর আগে ছিল মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
কর্মসংস্থানের এই পরিসংখ্যান নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এত কর্মসংস্থান হলে ভারতের বাজারে কেন তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, গত অর্থবছরে ক্রয় বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৪। এ ছাড়া আরবিআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে ৪ দশমিক ২ কোটি এবং ২০২০-২১ সালে ৩ দশমিক ১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান হয়েছিল। অথচ তখন ছিল কোভিডের বছর; বিপুলসংখ্যক মানুষ তখন রুটিরুজি হারিয়েছিলেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের বিরোধী দলগুলো ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব নিয়ে সরব হয়েছিল। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে মোদি সরকার কাজ শুরুর পর বেকারত্ব নিয়ে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। সম্প্রতি সিটি গ্রুপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ শতাংশ আর্থিক প্রবৃদ্ধি হলেও ভারতে যথেষ্ট কর্মসংস্থান হয়নি।
বিশেষ করে ভারতের তরুণদের কর্মসংস্থানের অবস্থা আরও শোচনীয়। সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেছেন, ভারতের তরুণদের বেকারত্বের হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। সিএমআইইর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত মে মাসে ভারতের তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে কৌশিক বসু লেখেন, ভারতের তরুণদের এই বেকারত্ব বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। এটা অর্থনীতির গভীর ক্ষতি করছে।
ভারতের নতুন বিনিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত নতুন বিনিয়োগ মাত্র ৪৪ হাজার ৩০০ কোটি রুপিতে নেমে এসেছে; ২০ বছরের মধ্যে যা সর্বনিম্ন।
ভারতের মাঝারি শিল্পগুলোর সংগঠন দ্য কনফেডারেশন অব মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ ইন ইন্ডিয়া বা সিএমআইইর পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত বছর ওই তিন মাসে ৭ দশমিক ৯ লাখ কোটি রুপির করপোরেট বিনিয়োগ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বছরের জানুয়ারি-মার্চেও তা ছিল ১২ দশমিক ৩৫ লাখ কোটি রুপি।
সরকারি শিবিরের যুক্তি, লোকসভা ভোটের সময় এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শিল্প খাতের গতি কমেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের ভোটের সময় অনেক বেশি বিনিয়োগ ঘোষিত হয়েছে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, ‘নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমেছে; মোদি সরকার এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।’