উড়োজাহাজে ভ্রমণ আবার বাড়ছে, বিপুল আয় হবে ২০২৩ সালে: আইএটিএ
মহামারির প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বের বিমান পরিবহন সেবা। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) সূত্রে যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এ বছর বিশ্বের বিমান পরিবহন খাতের রাজস্ব প্রায় রেকর্ড উচ্চতায় উঠবে, অর্থের অঙ্কে যা প্রায় ৮০৩ বিলিয়ন বা ৮০ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
তবে অভিযোগ আছে, বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো অত্যধিক ভাড়া নিচ্ছে, যদিও আইএটিএর মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ তা অস্বীকার করে গার্ডিয়ানকে বলেছেন, সরবরাহকারীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর মুনাফা একেবারেই কমে গেছে।
মহামারির সময় বিশ্বের বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর ক্ষতি হয়েছে ১৮৩ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মতো। সে ক্ষতি কাটিয়ে এই খাত এখন ‘নিরাপদ, লাভজনক, দক্ষ ও টেকসই ভবিষ্যতের’ দিকে তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন ওয়ালশ।
উইলি ওয়ালশ আরও বলেন, নানা ধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও মানুষ বিমানে ভ্রমণ করছেন। মানুষের ভ্রমণ বাড়লেও সবশেষ তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় বিমানের যাত্রীসংখ্যা ১০ শতাংশ কম।
আইএটিএর তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে বিমান পরিবহন খাতের মোট মুনাফা দাঁড়াবে ৮০ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। সে সঙ্গে এই খাতের নিট মুনাফা দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৯৮০ কোটি ডলার।
তারা ধারণা করছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের প্রায় ৪৩৫ কোটি মানুষ বিমানে ভ্রমণ করবেন, মহামারির আগের শেষ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে যত মানুষ বিমানে ভ্রমণ করেছেন, তার প্রায় ৯৬ শতাংশ। অংশত চীনের অর্থনীতি উন্মুক্ত হওয়া ও ভ্রমণের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এটি ঘটবে।
ওয়ালশ দ্য গার্ডিয়ানকে জানান, জ্বালানির মূল্যজনিত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিমানের ভাড়া বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, বাস্তবিকপক্ষে ভাড়া ২০১৯ সালের পর্যায়েই আছে।
এই বাস্তবতায় ওয়ালশ আরও বলেন, যাত্রীপ্রতি গড় মুনাফা হচ্ছে এখন মাত্র ২ দশমিক ২৫ ডলার। এই অর্থ দিয়ে নিউইয়র্ক শহরের সাবওয়ের টিকিটও কেনা যায় না। অর্থাৎ এখন যা মুনাফা হচ্ছে, তা টেকসই উন্নয়নের জন্য সহায়ক নয়। তবে ২০২০ সালে বিমান সংস্থাগুলোর যাত্রীপ্রতি ক্ষতি হয়েছে ৭৬ ডলার, সেই তুলনায় এখন ভালো মুনাফা হচ্ছে; পুনরুদ্ধারের গতি বেশ শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জও আছে বলে জানিয়েছেন ওয়ালশ। তিনি বলেন, ব্যয় অনেক বেশি, সে সঙ্গে কোথাও কোথাও কর্মিসংকট আছে। এমনও হচ্ছে যে বিমানবন্দরগুলো নিজেদের অদক্ষতার দায় বিমান সংস্থাগুলোর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বিমানবন্দরগুলো বেশি ভাড়া আদায় করছে।
এদিকে ২০২২ সালের নভেম্বরে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক জরিপে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে পর্যটন খাত গত বছর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২২ সালে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০ শতাংশ, ২০২৩ সালে এ খাতের ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও পর্যটন খাত প্রাক্–মহামারি পর্যায়ে ফিরবে না।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, অর্থনীতির শ্লথগতি ও সর্বোপরি অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের চলাচল ব্যাহত হবে। এর মধ্যেও বিমান সংস্থাগুলো মুনাফার ধারায় ফিরবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
তবে ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মানুষের ভ্রমণ আরও ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের কারণে রাশিয়া-ইউক্রেনের মানুষ এ সময় ভ্রমণ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই যুদ্ধের কারণে বিমানপথ সংকুচিত হবে, ভ্রমণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।