ভারতের আরও ২৫টি বিমানবন্দরের পরিচালনা করতে চায় আদানি গোষ্ঠী
আরও বিমানবন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায় ভারতের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। বর্তমানে তারা সাতটি বিমানবন্দর পরিচালনা করছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, আদানি এন্টারপ্রাইজেসের প্রতিনিধি এক অভ্যন্তরীণ উপস্থাপনায় দাবি করেছেন, চলমান লোকসভা নির্বাচনের পরে আরও ৩০ থেকে ৩৫টি বিমানবন্দরের বেসরকারীকরণ করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে অন্তত ২৫টি বিমানবন্দরের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস। দরপত্র আহ্বান করা হলে তারা সেভাবেই অংশগ্রহণ করবে।
এর আগে ২০১৯ সালের নিলামে ত্রিবান্দ্রম, বেঙ্গালুরু, আহমেদাবাদ, জয়পুর, লক্ষ্ণৌ ও গুয়াহাটি বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পায় আদানি গোষ্ঠী। ২০২১ সালে জিভিকের কাছ থেকে পায় মুম্বাই বিমানবন্দর। সব মিলিয়ে ভারতের ২৩ শতাংশ বিমানযাত্রীকে পরিষেবা দেয় তারা।
আদানি এন্টারপ্রাইজেসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সৌরভ শাহ দাবি করেছেন, নির্বাচনের পর আবার বিমানবন্দর বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় সরকার। চেন্নাই, ভুবনেশ্বর, অমৃতসর ও বারানসির মতো বড় বড় বিমানবন্দরের সঙ্গে ছোট কয়েকটি বিমানবন্দরও তালিকায় থাকবে। একসঙ্গে ‘বান্ডল’ হিসেবে দরপত্র পেশ করা হলে অপেক্ষাকৃত কম খরচে এই দায়িত্বভার পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আদানি গোষ্ঠী সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
সৌরভ শাহ আরও বলেছেন, আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে যেভাবে ব্যবসা পরিচালনা সহজ হবে, সেভাবেই দরপত্র দেওয়া হবে।
এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর যা হওয়ার কথা ছিল, তা–ই হয়েছে। অর্থাৎ ভারতের বিরোধী দলগুলো মোদি সরকার ও গৌতম আদানির বিরুদ্ধে তোপ দাগাতে শুরু করেছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের হুঁশিয়ারি, কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পরে আদানি গোষ্ঠীর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না; এমনকি তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠন করা হবে।
বিরোধীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের করের টাকায় তৈরি বিমানবন্দর ‘বন্ধু শিল্পপতির’ হাতে তুলে দিতে চাইছে মোদি সরকার।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিমানবন্দর বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। এ–বিষয়ক সংবাদ প্রতিবেদন পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর (নরেন্দ্র মোদি) কৃপায় ইতিমধ্যেই আদানি গোষ্ঠীর ভারতের একমাত্র বেসরকারি বিমানবন্দর পরিচালনাকারী সংস্থায় পরিণত হয়েছে। এসব সরকারি সম্পত্তি। সাধারণ মানুষের বিপুল অঙ্কের করের কল্যাণে এসব তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। অথচ সেসব বিমানবন্দর সামান্য অর্থের বিনিময়ে টেম্পোম্যানের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।’
নরেন্দ্র মোদিকে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্ভাষণ করে জয়রাম রমেশ বলেন, এই কেলেঙ্কারির জেপিসি তদন্ত হবে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে গৌতম আদানি বিশ্বের শীর্ষ পাঁচজন ধনীর একজন ছিলেন। কিন্তু সেই মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ট সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনে সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। তাদের অভিযোগ ছিল, আদানি গোষ্ঠী শেয়ার জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির বাজারমূল্য বাড়িয়েছে।
এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ৯ দিনের মধ্যে গৌতম আদানির বিভিন্ন কোম্পানির বাজার মূলধন ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে যায়। গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্যও অনেক কমে যায়। একসময় ধনীদের তালিকায় তিনি ২৪তম স্থানে নেমে যান।
আজ বুধবার সকালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকা অনুসারে গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য ছিল ৮ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার। ধনীদের তালিকায় তাঁর স্থান ছিল ১৮তম।