বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমেছে চীনের
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধির কমেছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, রয়টার্স পরিচালিত এক জরিপে অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের অবস্থা কয়েক বছর ধরেই ভালো নয়। দেশটির জিডিপির সবচেয়ে বড় খাত আবাসনের অবস্থা শোচনীয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে রপ্তানি কমেছে; সেই সঙ্গে দেশটির অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদাও কমেছে।
এ পরিস্থিতিতে চীন উৎপাদন খাত চাঙা করার চেষ্টা করছে। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী উচ্চমানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করছে তারা, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে জোর দেওয়ার চেষ্টা করছে দেশটি।
জুন মাসে অবশ্য প্রত্যাশার চেয়ে চীনের শিল্পোৎপাদন বেড়েছে। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, গত মাসে দেশটির শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৩। তবে গত মাসে খুচরা বিক্রি বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশা বা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন অনেক কম হয়েছে। এ ছাড়া বছরের প্রথম ভাগে স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
পরিসংখ্যান দেখে বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনে এখন উৎপাদন যে হারে বাড়ছে, চাহিদা সেই হারে বাড়ছে না। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
জুন মাসে চীনের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ; এই হিসাব ডলারে পণ্য রপ্তানির। যদিও এই সময়ে আমদানি কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এ চিত্র দেখে বোঝা যাচ্ছে, চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাচ্ছে।
এদিকে জুন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। গত এক বছরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি নেই, বরং মূল্যহ্রাসের পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রয়টার্সের হিসাব দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, জুন মাসে চীনে নতুন বাড়ির দাম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। বছরের প্রথম ভাগে নতুন নির্মাণ প্রকল্প ও আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ কমেছে যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৭ ও ১০ দশমিক ১ শতাংশ।
আজ সোমবার চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় প্লেনাম শুরু হয়েছে। চার দিনের এই সম্মেলন থেকে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্লেনামের আগে চীনের পরিসংখ্যান দপ্তর এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম প্লেনাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অর্থনীতি চাঙা করতে চীন সরকার মাঝেমধ্যে প্রণোদনা দিচ্ছে। আবাসন খাতে গতি আনতে গত মে মাসে সরকার ঘোষণা দেয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো অবিক্রীত বাড়িঘর কিনতে পারবে। পর্যবেক্ষকেরা এখন প্লেনামের দিকে তাকিয়ে আছেন সেখান থেকে কী নির্দেশনা আসে, তা দেখতে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের চীনবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ লুইস লু ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ঋণ, মূল্যস্ফীতি, খুচরা বিক্রয় ও বিনিয়োগের পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায়, চাহিদা প্রকৃত অর্থেই কমছে। এ ছাড়া দেশটির অর্থনীতি থেকে ধারাবাহিক কোনো চিত্র না পাওয়ায় বছরের দ্বিতীয় ভাগে যে বড় ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হবে, এমন সম্ভাবনা কম।