এবার শুল্কযুদ্ধ নিয়ে মুখ খুললেন সি চিন পিং, বললেন কেউ জিতবে না
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির প্রসঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, ‘শুল্ক বা প্রযুক্তিযুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হবে না।’ এর আগেও চীনের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে।
বেইজিংয়ে গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার ১০ শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে এ মন্তব্য করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের রীতি আছে। কিন্তু এর পরিবর্তে এবারই প্রথম বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ওয়াশিংটনের প্রতি বেইজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরলেন সি চিন পিং। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই চীনের সঙ্গে চলমান প্রযুক্তি ও শুল্ক যুদ্ধের তীব্রতা আরও বৃদ্ধির হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া মার্কিন প্রযুক্তি স্থানান্তরে বেইজিংয়ের ওপর বিধিনিষেধ নতুন বিষয় নয়। বিশেষ করে চিপপ্রযুক্তি রপ্তানিতে বাইডেন প্রশাসন দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব বিষয় নিয়ে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগে মন্তব্য করলেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
৬ ডিসেম্বর সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বেইজিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। যদিও এই যোগাযোগের সত্যতা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি বেইজিং। সব মিলিয়ে নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরঙ্কুশ জয়ের পর দুজনের মধ্যে এটাই যোগাযোগের প্রথম খবর।
সি চিন পিং বলেন, মার্কিন সরকারের সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতা বাড়ানো এবং পারস্পরিক মতপার্থক্যের বিষয়ে যৌক্তিক অবস্থান নিতে প্রস্তুত চীন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মতো প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা। গ্রেট হল অব দ্য পিপলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সি চিন পিং বলেন, ‘শুল্কযুদ্ধ, বাণিজ্যযুদ্ধ ও প্রযুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের ধারা ও অর্থনৈতিক আইনবিরোধী এবং এসব যুদ্ধের কেউ জয় পায় না।’
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে নিজেদের নীতি বজায় রাখায় জোর দেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি বলেছেন, চীন সব সময় নিজের পরিসরেই থাকবে—সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ দৃঢ়তার সঙ্গে রক্ষা করবে। একই সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে অতি উদার থাকার রীতি অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সি চিন পিংয়ের বক্তব্যে বোঝা যায়, বেইজিং উত্তেজনা বাড়াতে চায় না; কিন্তু একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তু হলে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন নীতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেয়ার পর বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের পরিসর আরও বাড়বে। বিশ্ববাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল এ রকম: চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে। এরপর গত মাসে তিনি বলেন, ক্ষমতায় বসার পর প্রথম কাজ হবে চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক এবং কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা সব পণ্যে ২৫ শতাংশ করারোপ করা।
এদিকে গত সোমবার মার্কিন চিপ কোম্পানি এনভিডিয়ার বিরুদ্ধে একচেটিয়া বাণিজ্যবিরোধী আইন লঙ্ঘনের সন্দেহে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে চীন। চিপ খাতে ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক বিধিনিষেধের প্রতিশোধ হিসেবে চীন এ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর পরদিনই সি চিন পিং বললেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হবে না।’
মহামারি-পরবর্তী সময় চীনের অর্থনীতি এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আবাসন খাতসহ বিভিন্ন খাতে ধীরগতির প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে। তবে দেশটির নেতারা অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন চীনের জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।