ভারতে আদানিকে আরও সুবিধা, মওকুফ হয়েছে ঋণ
ভারতে আবারও বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পেয়েছে দেশটির আলোচিত শিল্প গ্রুপ আদানি গোষ্ঠী। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক আদানির বিপুল ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
দ্য ইকোনমিক টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়,আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানির বিপুল পরিমাণ ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। ঋণ ফেরত দিতে না পারায় দেউলিয়া আদালতে থাকা আদানির ১০টি কোম্পানির ৬১ হাজার ৮৩২ কোটি রুপির বকেয়া ঋণের দাবি মাত্র ১৫ হাজার ৯৭৭ কোটি রুপির বিনিময়ে মিটিয়ে ফেলেছে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। তাতে মওকুফ করা হয়েছে বেশির ভাগ বকেয়া। এই ১০ কোম্পানি কিনেছে গৌতম আদানির গোষ্ঠী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর এ সিদ্ধান্তে ব্যাংকের কর্মীদের নিয়ে গঠিত ইউনিয়নগুলোও এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছে। বিষয়টি নিয়ে যথারীতি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় পাত্র আদানির হাতে মালিকানা যাওয়ায় এসব কোম্পানির ঋণ মওকুফ করতে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তি পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৫০০ একর লবণাক্ত জমি মহারাষ্ট্র সরকার আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেসের সংসদ সদস্য বর্ষা গায়কোয়াড়। তাঁর দাবি, মুম্বাইয়ের সাধারণ মানুষের ওই জমি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। সেই জমি দখল করতে চাইছেন আদানিরা। মুম্বাইয়ের রাজ্য সরকারে আছে এনডিএ জোট। এই রাজ্য সরকারকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ আখ্যা দিয়েছেন বর্ষা গায়কোয়াড়। তাঁর দাবি, এই সরকার আদানিদের সুবিধা দিতে সবকিছু করতে পারে।
ভারতের ব্যাংকের কর্মীদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (এআইবিইএ) বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ঋণ মওকুফের বিষয়ে জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, আদানিদের সুবিধা দিতে অতি অল্প অর্থের বিনিময়ে বকেয়া ঋণের ফয়সালা করেছে ব্যাংকগুলো। এতে সাধারণ আমানতকারীদের ক্ষতি হয়েছে। এর বিনিময়ে মুনাফা করছে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতি আদানি গোষ্ঠী।
এআইবিইএর সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, মোদি সরকার সম্ভাব্য সব উপায়ে আদানিদের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছে, এটা এখন স্পষ্ট। সে জন্য দেউলিয়া আইনকেও ব্যবহার করতে পিছপা হচ্ছে না তারা। এত কম অর্থের বিনিময়ে বকেয়া ঋণের রফা করে আদানিদের কোম্পানিগুলোর মুনাফার পথ চওড়া করা হয়েছে। লোকসান মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে।
এআইবিইএর আরও অভিযোগ করেছে, আদানিদের প্রতি উদার হয়ে বকেয়ার ৭৪ শতাংশ অর্থ ছেড়ে দিলেও ব্যাংকগুলো সাধারণ গ্রাহকদের প্রতি সদয় নয়। হিসাবে ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ না থাকলে মানুষকে জরিমানা করতে পিছপা হয় না ব্যাংকগুলো। এভাবে পাঁচ বছরে ৮ হাজার ৫০০ কোটি রুপি জরিমানা আদায় করা হয়েছে দেখে মনে হচ্ছে, গরিবদের লুট করে ধনীদের বিলিয়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে মোদি সরকার।
এভাবে ঋণ মওকুফ করে দেওয়ার বিষয়টি অর্থনীতির ভাষায় ‘হেয়ারকাট’ হিসেবে পরিচিত। যদিও অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, হেয়ারকাটের পরিমাণ বেশি হওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ট সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। এরপর আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে ধস নামে। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিক গৌতম আদানির অবস্থান ছিল পাঁচের মধ্যে। একপর্যায়ে তাঁর অবস্থান ২০-এর ঘরে নেমে যায়।
এরপর গৌতম আদানি অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ছে না। চলতি সপ্তাহেই অভিযোগ ওঠে, কেনিয়ায় আদানি গোষ্ঠীর বিমানবন্দর অধিগ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এবার এল বড় অঙ্কের ঋণ মওকুফের অভিযোগ।