কয়লার দামে কারসাজির অভিযোগ, আদানির বিরুদ্ধে আবার তদন্তের আবেদন
কয়লা আমদানির মূল্য বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পুনরায় তদন্ত শুরু করতে চায় ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে সিঙ্গাপুর থেকে তথ্য সংগ্রহে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি চেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। তারা বলছে, অনেক দিন ধরেই এই তথ্য সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এই আবেদনের শুনানি হতে পারে।
এর ফলে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে একের পর এক অভিযোগে জর্জরিত আদানি গোষ্ঠীর ওপর চাপ আরও বাড়ল বলে মনে করছে ভারতের সংশ্লিষ্ট মহল।
সেই ২০১৬ সাল থেকে ভারতের ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স সিঙ্গাপুর থেকে আদানির কয়লা আমদানিসংক্রান্ত কাগজপত্র আনার চেষ্টা করছে। সংস্থাটির সন্দেহ, আদানি গোষ্ঠী সিঙ্গাপুর থেকে যে কয়লা আমদানি করেছে, সিঙ্গাপুরের আদানি গ্লোবাল পিটিইর কাগজ–কলমে তার দাম বেশি দেখানো হয়েছে এবং তার পর সেই অতিরিক্ত দাম গোষ্ঠীর ভারতীয় শাখার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে।
গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি এন্টারপ্রাইজ এর আগে কয়েকবার সিঙ্গাপুর থেকে এই কয়লা আমদানির কাগজপত্র সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করেছে। আদানি গোষ্ঠী অবশ্য বলে আসছে, এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভুল বা অনিয়ম করা হয়নি। তাদের ভাষ্য, ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বন্দর থেকে এই কয়লা ছাড় করার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ছেড়েছে।
এ বিষয়ে ভারতের রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তর গত ৯ অক্টোবর দেশটির সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। মূলত দেশটির নিম্ন আদালত আদানির এই কাগজপত্র সংগ্রহের বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা বাতিল করার আবেদন করে সংস্থাটি।
রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তর আদানি গোষ্ঠীর যুক্তি খণ্ডন করে বলেছে, কয়লা আমদানি নিয়ে এই তদন্ত যথাযথ নিয়মকানুন মেনেই করা হচ্ছে। এমনকি দেশটির স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়েই তা করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের কাছে ২৫ পৃষ্ঠার আবেদনে তারা এসব কথা বলেছে।
এদিকে রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আদানি গোষ্ঠী বলেছে, চার বছর আগে তাদের কাছ থেকে এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র চাওয়া হয়েছিল এবং তদন্তকারী সংস্থাকে পুরোপুরি সহায়তা করেছে তারা। এর মধ্যে গত চার বছরে তদন্তকারী সংস্থা কোনো আপত্তি জানায়নি বা কাগজপত্রে ঘাটতি আছে, এমন কথা বলেনি।
তবে ভারতের রাজস্ব সংস্থা অবশ্য রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দিতে চায়নি।
বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা বলেছেন, সিঙ্গাপুরের ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর লেনদেনের কাগজপত্র চাইছে ভারতের রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তর। এসব কাগজপত্র পাওয়া গেলে গোষ্ঠীটির আর্থিক লেনদেনের ইতিবৃত্ত মিলবে।
এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তরের আবেদন অনুমোদন করলে সিঙ্গাপুরের আপিল আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। সেটা পেলেই কাগজপত্র ভারতীয় সংস্থার হাতে আসবে।
তবে শত শত পৃষ্ঠার আদালতের নথি পর্যালোচনা করে রয়টার্স দেখেছে, বিষয়টি নিয়ে ভারতের আদালতের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর লড়াই চলছে। ২০১৯ সালে মুম্বাই হাইকোর্ট বলেছিলেন, যেভাবে কয়লা আমদানির নথিপত্র সংগ্রহের আবেদন করা হয়েছে, তা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে করা হয়নি।
২০২০ সালে সিঙ্গাপুরের আদালত বলেন, যেহেতু ভারতের আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি, তাই এসব নথিপত্র ছাড় করা যাবে না।
এদিকে ভারতের বিরোধী দলগুলো এই সুযোগে সরকারের সমালোচনা শুরু করেছে। আদানিদের বিরুদ্ধে আবার তদন্ত শুরুর সম্মতি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে, সেটাই এখন সংশ্লিষ্ট মহলের আলোচনার বিষয়। অনেকের মতে, বিরোধীদের চাপেই এই সিদ্ধান্ত। আদানিদের বক্তব্য, তারা তদন্তে সহযোগিতা করেছে। চার বছরের বেশি সময় আগে তদন্তকারী সংস্থাকে বিভিন্ন লেনদেনসংক্রান্ত নথিও দিয়েছে তারা।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশকের বেশি সময় ধরে কারচুপি করে শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলো। এ জন্য কয়লা ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সরঞ্জাম বেশি দামে আমদানি করে বিদেশে টাকা পাচার করেছিল তারা। সেই পুঁজি ব্যবহার করেই আবার ভুঁইফোড় বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থাকে দিয়ে নিজেদের কোম্পানির শেয়ার কিনিয়েছে তারা।
এই প্রতিবেদনের জেরে গৌতম আদানির সাজানো বাগান রীতিমতো লন্ডভন্ড হয়ে যায়। গোষ্ঠীর বাজারমূলধন কমে যায় ১৫০ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার কোটি ডলার।