রাজা তৃতীয় চার্লস কতটা ধনী, কী কী সম্পদ রয়েছে তাঁর
উত্তরাধিকার, রাজকীয় ভূসম্পত্তি এবং যুবরাজ থাকা অবস্থায় অর্থকড়ির বিচক্ষণ বিনিয়োগ, এই সবকিছুর মাধ্যমে বড় সম্পদের মালিক হয়েছেন তৃতীয় চার্লস। আর এই ধনী তৃতীয় চার্লসেরই রাজ্যাভিষেক হতে যাচ্ছে আগামী ৬ মে। খবর এএফপির
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গত বছরের সেপ্টেম্বরে মারা যাওয়ার সময় তাঁর ছেলেকে উইল করে যে সম্পদ দিয়েছেন, তার মূল্য ৩৬ কোটি পাউন্ড, মার্কিন মুদ্রায় যা ৪৪ দশমিক ৮০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ। দ্য টাইমসের হিসাব বলছে, উত্তরাধিকার সূত্রে এই সম্পদ পাওয়ার ফলে চার্লসের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি পাউন্ড।
রাজা হওয়ার আগে চার্লস ছিলেন প্রিন্স অব ওয়েলস। ১৯৯৬ সালে তাঁর স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের পর চার্লস উচ্চাভিলাষী সব বিনিয়োগ শুরু করেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। টাইমস খবরে বলা হয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের জন্য চার্লসকে ১ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড খরচ করতে হয়েছিল।
চার্লসের মা যখন ১৯৫২ সালে ব্রিটেনের রানি হয়েছিলেন, যুবরাজ হিসেবে তখন তিনি ডাচি অব কর্নওয়াল থেকে আয় পেতে শুরু করেন। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যেন আর্থিকভাবে স্বাধীন থাকতে পারেন, সে লক্ষ্য নিয়ে চতুর্দশ শতকে রাজকীয় এই ভূসম্পত্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
চার্লসের ‘সব আবেগ ঘিরে ছিল’ এই ভূসম্পত্তি, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী কামিলা ২০১৯ সালে আইটিভির এক ডকুমেন্টারিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছিলেন।
রাজকীয় ওই ভূসম্পত্তিতে ২৬০টি খামার রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে ৫২ হাজার ৪৫০ হেক্টর (প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার একর) ভূমি এবং ভাড়া দেওয়া বাণিজ্যিক গৃহসম্পত্তি, যার মূল্য ৩৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড। চার্লসের উত্তরাধিকার প্রিন্স অব ওয়েলস এখন ওই ভূসম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে ডরচেস্টারের কাছাকাছি ডাচি অব কর্নওয়ালের জমিতে চার্লস তাঁর বিভিন্ন স্থাপত্য ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজটি করে থাকেন। তাঁর নেতৃত্বে এই ভূসম্পত্তি থেকে ১০০ কোটি পাউন্ডের সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে। যুবরাজ হিসেবে এখান থেকে তিনি বছরে কমবেশি ২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড আয় পেতেন। ১৫ বছর আগের তুলনায় এই আয় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।
বিলিয়নিয়ার রাজা
শত শত বছর ধরে ব্রিটিশ রাজাদের তাঁদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ওপর কোনো কর দিতে হয় না। এটা করা হয়েছিল এ কারণে যে রাজকীয় সম্পত্তি যেন খণ্ডবিখণ্ড না হয়। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের সময় বিষয়টি আবার নিশ্চিত করা হয়।
যুক্তরাজ্যে রাজা-রানিদের উইল জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয় না। তার মানে হলো, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের উইলে কী আছে, সাধারণ মানুষ তা জানতে পারবে না।
তবে এটা জানা যে উত্তর-পূর্ব স্কটল্যান্ডে অবস্থিত বালমোরাল দুর্গ এবং ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত স্যান্ড্রিংহ্যাম এলাকার ভূসম্পত্তি চার্লসকে দেওয়া হয়েছে। বালমোরাল দুর্গে রাজকীয় পরিবার সাধারণত গ্রীষ্মের সময়টা কাটায়। রানি এলিজাবেথ সেখানেই গত সেপ্টেম্বরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
বালমোরাল দুর্গ এবং স্যান্ড্রিংহ্যাম—দুটিই ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তবে লন্ডনে অবস্থিত বাকিংহাম প্রাসাদ ও রাজধানীর পশ্চিমে অবস্থিত উন্ডসর দুর্গ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের আরেকটি ঐতিহাসিক প্রতীক, রাজকীয় রত্নরাজি, যা ক্রাউন জুয়েলস নামে পরিচিত, তা দেশের সম্পদ। ফলে রাজকীয় সম্পত্তির হিসাবের সময় এগুলো বিবেচনা করা হয় না। এই সম্পদের মূল্য বেশ কয়েক শ কোটি পাউন্ড বলে মনে করা হয়।
রাজা হিসেবে চার্লস একটি বাৎসরিক ভাতা পেয়ে থাকেন। এটি হলো ক্রাউন এস্টেট হিসেবে পরিচিত বিশাল ভূসম্পত্তি এবং বাড়িঘরের আয় থেকে পাওয়া মুনাফার এক-চতুর্থাংশ। ওই আয়ের বাকি অংশ সরকারের অর্থ বিভাগে চলে যায়।
২০২১-২২ সালে এই বাৎসরিক ভাতার পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৬৩ লাখ পাউন্ড।
আরেকটি রাজকীয় সম্পত্তি হলো ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার। এটি সরাসরি রাজা বা রানির নিয়ন্ত্রণে থাকে। ২০২২ সালে এখান থেকে রানি পেয়েছিলেন ২ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড।
রাজকীয় সম্পত্তি থেকে রাজা বা রানি সত্যিকার অর্থে কী পরিমাণ আয় করেন, সেটা জানা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন লন্ডনের আইনি প্রতিষ্ঠান স্টুয়ার্টসের আইনজীবী জেফ কাসটেসজ। ‘আমার মনে হয় না যে এটা কেউ জানে,’ এএফপিকে বলেন তিনি।
ব্রিটেনের গার্ডিয়ান সংবাদপত্র চেষ্টা চালিয়েছিল তাদের ‘কস্ট অব দ্য ক্রাউন’ সিরিজের মাধ্যমে একটা হিসাব বের করার।
তাদের এই হিসাবে যোগ করা হয়েছিল ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টারের আয়। আইনত এটি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত, কিন্তু এর পুরো মুনাফা রাজা বা রানির কাছে চলে যায়। হিসাবে আসে বিলাসবহুল সব যানবাহন, সত্যিকার অর্থে যেগুলোর মালিক রাষ্ট্র, কিন্তু এককভাবে ব্যবহার করে রাজপরিবার। আরও বিবেচনা করা হয় দামি সব চিত্রকর্ম এবং অলংকার।
এই সবকিছু মিলিয়ে চার্লসের সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ১৮০ কোটি পাউন্ড।