জিম্বাবুয়ের যন্ত্র তৈরির কোম্পানি জিওসাড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাছে বর্তমানে আকরিক গ্রাইন্ডিং মিল, তেল ও গ্যাস ট্যাংক তৈরির কয়েকটি কার্যাদেশ রয়েছে। তবে ঠিক সময়ে এই কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছে কোম্পানির কর্মীরা। এর একমাত্র কারণ লোডশেডিং।
দীর্ঘদিন ধরেই জিম্বাবুয়েতে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট স্বাভাবিক ঘটনা। তবে বর্তমানের মতো অতীতে কখনো এত বেশি লোডশেডিং হয়নি। দিনের অর্ধেক সময় সেখানে কোনোরকমে বিদ্যুৎ থাকছে, কিন্তু রাত ১০টা বাজতেই জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেতে নেমে আসে অন্ধকার।
বিদ্যুৎ চলে গেল হারারের উইলোভেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানাগুলোতে শ্রমিকেরা আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসেন। এরপর দীর্ঘ সময় চলতে থাকে আড্ডা ও হাসাহাসির পালা; কারণ, কখন আবার বিদ্যুৎ আসবে তার ঠিক নেই। এর আগ পর্যন্ত তাদের কাজও নেই।
অন্যদিনের মতো গত শনিবার রাতেও জিওসাড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শ্রমিকেরা চাঁদের আলোর নিচে আগুনের ছোট কুণ্ডলীর চারপাশে বসে বিদ্যুৎ আসার অপেক্ষা করছিলেন। সে দিন রাত ১০টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে ফোন করেন কারখানাটির শ্রমিক জর্জ সাদজিওয়া। তবে রাত ১১টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে যেকোনো সময় বিদ্যুৎ আসতে পারে বলে তাঁকে জানানো হয়।
জর্জ সাদজিওয়া বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায় বিদ্যুৎ খুবই প্রয়োজনীয়। তবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার সময়সূচি নেই এখানে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ কখন যাবে, তা মোটামুটি ধারণা করা যায়, তবে আসার সময়সূচি নেই। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতির শিগগিরই অবসান হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। এই আশাতেই অপেক্ষা করে আছেন জর্জ সাদজিওয়া ও তাঁর সহকর্মীরা। তবে সেটি না হলে কারখানায় বিপর্যয় নেমে আসবে বলে জানান সাদজিওয়া।
গত এক দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে জিম্বাবুয়ে। এরপরও দেশটি নিয়মিত লোডশেডিংয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
তবে দেশটিতে চলমান এই তীব্র সংকট বেশি দিন আগে শুরু হয়নি। দেশটির জাম্বেজি নদীতে পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে নেমে যাওয়ার কারণে সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় নদী কর্তৃপক্ষ। এতেই লোডশেডিংয়ের তীব্রতা বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কম। এ ছাড়া নদীতে পানির স্তর কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনও কমে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্নবিত্ত পরিবার
লোডশেডিংয়ের কারণে মুরগির ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের চল্লিশোর্ধ্ব নারী ভেলা চিডজিভা। বিদ্যুৎ না থাকায় তাঁর খামারের বেশ কিছু মুরগি মারা যায়।
বাসায় আগুন জ্বালানোর জন্য এখন রাস্তা থেকে খালি প্লাস্টিকের প্যাকেট সংগ্রহ করেন ভেলা চিডজিভা। তিনি বলেন, মাঝরাতে বিদ্যুৎ আসে, আবার ভোর ৪টার মধ্যেই চলে যায়। অন্যদিকে, গ্যাসের দাম অনেক বেশি, তাই এভাবেই চলতে হচ্ছে।
সংকটে নাগরিকেরা খুঁজে পাচ্ছেন হাস্যরস
এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় সাধারণ নাগরিকেরা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাস্যরস করছেন। জিম্বাবুয়ের একজন নাগরিক জামার ওপরে ফুটন্ত পানির একটি পাত্র রেখে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। এর সঙ্গে লেখেন, ‘দেখুন, কীভাবে বিদ্যুৎ ছাড়াই আমাদের জামাকাপড় ইস্ত্রি করা যাচ্ছে।’
সংকট মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশ মোজাম্বিক ও জাম্বিয়া থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করেছে জিম্বাবুয়ে। পাশাপাশি আগামী ২ বছরের মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে দেশটির সরকার।