কর্মক্ষেত্রে চাপ ও ক্রোধের কারণে বৈশ্বিক জিডিপির ক্ষতি ৮.৯ ট্রিলিয়ন ডলার
কর্মক্ষেত্রে কর্মীরা প্রতিদিনই নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলে তার ফল ভালো হয় না। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের আবেগে প্রতিদিন নেতিবাচক প্রভাব পড়লে এবং সামগ্রিকভাবে তাঁদের কল্যাণ ব্যাহত হলে কাজের সঙ্গে একাত্মতা কমে যায়।
স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ওয়ার্কফোর্স শীর্ষক গ্যালাপের প্রতিবেদনে কাজের সঙ্গে কর্মীদের একাত্মতার অভাবে কী ক্ষতি পারে, তার আনুমানিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ কারণে বৈশ্বিক জিডিপির ৯ শতাংশ বা ৮ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন বা ৮ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হতে পারে। খবর বিবিসি।
বিশ্বের ১৪০টি দেশের ১ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮ জন কর্মীকে নিয়ে জরিপ করেছে গ্যালাপ। সেই জরিপের ফলাফল এ প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ২০ শতাংশ কর্মী বলেছেন, তাঁরা প্রতিদিনই কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন, যেমন একাকিত্ব, দুঃখবোধ ও রাগ। ৪১ শতাংশ বলেন, তাঁরা প্রতিদিনই চাপে থাকেন।
কর্মক্ষেত্রে একাকিত্ব বোধ করা কর্মীদের বড় অংশই তরুণ; তাঁরা জরিপে অংশ নেওয়া কর্মীদের ২২ শতাংশ। এ ছাড়া যাঁরা দূর থেকে পূর্ণকালীন কাজ করেন, তাঁদের মধ্যেও ২৫ শতাংশ একাকিত্বে ভোগেন। যাঁরা কাজের প্রতি একাত্মতা কম অনুভব করেন, তাঁদের মধ্যেও ৩১ শতাংশ একাকিত্ব বোধ করেন।
কাজের কারণেই যে কর্মীদের মধ্যে প্রতিদিন নেতিবাচক আবেগ তৈরি হয়, তা নয়। তারপরও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়োগদাতাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কাজের জন্য কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণে যেমন ভালো প্রভাব পড়তে পারে, তেমনি মন্দ প্রভাবও পড়তে পারে।
গ্যালাপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীরা যদি দেখেন, তাঁদের কর্ম ও কর্মসম্পর্ক অর্থপূর্ণ, তাহলে কাজের মধ্যে আনন্দ বৃদ্ধি পায়। নেতিবাচক আবেগের পরিসরও সংকুচিত হয়। মনে রাখা দরকার, অর্ধেকের বেশি কর্মী জীবনে উন্নতি করার জন্য সংগ্রাম করেন। সে জন্য আনন্দময় কাজের পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি।
কাজের সঙ্গে একাত্মতা না থাকা কর্মহীনতার সমান বা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও খারাপ। যাঁরা কাজ উপভোগ করেন না, তাঁদের জীবনে কাজ রীতিমতো বোঝায় পরিণত হয়। প্রতিদিন এ পরিস্থিতি থাকলে কাজের চাপ দুর্বহ হয়ে ওঠে। নেতিবাচক বা ক্ষতিকর আবেগ তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে, যেমন রাগ ও একাকিত্ব। বেকারত্ব মানুষের জীবনে বড় চাপ তৈরি করে; এই চাপ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের পরিস্থিতি একই রকম ক্ষতিকর হতে পারে।
জরিপে দেখা গেছে, গত বছর যাঁরা জরিপে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৩ শতাংশ কর্মীর কাজের সঙ্গে একাত্মতা ছিল। আগের বছরেও একই পরিস্থিতি ছিল। গ্যালাপের সংজ্ঞায় একাত্মতা এ রকম: কর্ম ও কর্মক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার অংশগ্রহণ এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে কাজ করা। মনস্তাত্ত্বিকভাবে কর্ম ও কর্মক্ষেত্রকে তাঁরা ধারণ করেন—এ বোধ থাকলে নৈপুণ্যে প্রভাব পড়ে; প্রতিষ্ঠানও সামনের দিকে অগ্রসর হয়।
এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজের প্রতি একাত্মতা বোধ করেন না—এমন কর্মীর সংখ্যা ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এই কর্মীরা কাজ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিকভাবে একাত্ম নন। একাত্মতা বোধ করার ক্ষেত্রে তাঁদের যে চাহিদা, তা পুরোপুরি না মেটার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কাজে তাঁরা সময় দিচ্ছেন ঠিকই; কিন্তু শক্তি ও আবেগ প্রয়োগ করছেন না।’
যেসব প্রতিষ্ঠানে সর্বোত্তম কর্মসংস্কৃতির চর্চা করা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের একাত্মতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকদের মধ্যে প্রতি চারজনে তিনজন একাত্মতা বোধ করেন এবং কর্মীদের প্রতি দশজনে সাতজন তা অনুভব করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে যা করা হয়, তা হলো কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের কল্যাণে মনোযোগ দেওয়া, ব্যবস্থাপক নিয়োগ ও তাঁদের মানোন্নয়নে উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।
সংবাদে বলা হয়েছে, কর্মীদের কাজের সঙ্গে একাত্ম করতে ব্যবস্থাপকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবস্থাপকেরা সক্রিয়ভাবে কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে বা অঙ্গীকারবদ্ধ হলে কর্মীরাও কাজের প্রতি বেশি একাত্মতা বোধ করেন। এতে কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত হয়; পরিণামে উৎপাদনশীলতা ও মুনাফা বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বের মোট ১০টি অঞ্চলে গ্যালাপ এ জরিপ পরিচালনা করেছে। দেখা গেছে, একেক অঞ্চলে কর্মীদের কাজের সঙ্গে একাত্মতা ও কল্যাণের মাত্রা একেক রকম। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় কর্মীদের একাত্মতার হার সবচেয়ে বেশি—৩৩ শতাংশ। কিন্তু একই সঙ্গে দেখা গেছে, এই অঞ্চলে কর্মীদের দৈনিক চাপের মুখে পড়ার হারও বেশি—৪৯ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে তাঁরা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ঠিক পেছনে, যেখানে এই হার ৫২ শতাংশ। কর্মীদের একাত্মতার হার সবচেয়ে কম ইউরোপে—মাত্র ১৩ শতাংশ।
সবচেয়ে কম চাপে থাকেন ইউরেশিয়ার কর্মীরা; সেখানে এই হার মাত্র ১৯ শতাংশ।