মার্কিনদের কেনাকাটা কমতে শুরু করেছে

যুক্তরাষ্ট্রছবি: রয়টার্স

মার্কিনদের পক্ষে আগের মতো খরচ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ নীতি সুদহারের প্রভাব তাদের জীবনে পড়তে শুরু করেছে।

সিএনএন জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় সরকারের দেওয়া প্রণোদনার জেরে মার্কিন ভোক্তারা এত দিন উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দিয়েছেন। সেই সঞ্চয় ফুরিয়ে আসছে। ফলে নাগরিকদের ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণ খেলাপ করার হারও বেড়েছে।

দোকানিরা বলছেন, জিনিসপত্রের উচ্চ মূল্য দেখতে দেখতে মানুষ বিরক্ত হয়ে কেনাকাটার ধরন বদলে ফেলছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি মানুষের ভোগ ব্যয়, কিন্তু মার্কিনদের এই ভোগ ব্যয় করার প্রবণতা নানা দিক থেকে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে।

মহামারির পতন কাটিয়ে ওঠার সময় মার্কিন ক্রেতাদের ভোগ ব্যয় অনেকটা বেড়েছে। ২০২১ সালে সেই প্রবণতার ওপর ভর করে মূল্যস্ফীতির হার প্রথম বাড়তে শুরু করে। এমনকি গত বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন নাগরিকদের এই প্রবণতা অব্যাহত ছিল। ফলে কনসার্টের উচ্চ মূল্যের টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে মানুষের ভ্রমণ রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছিল। মন্দার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা এড়ানো সম্ভব হয়।

কর্মসংস্থানের হারও ভালো থাকায় মানুষের ভোগ ব্যয়ের প্রবণতা অব্যাহত ছিল। বেকারত্বের হার ৪ শতাংশের নিচে। প্রতি মাসে যত মানুষ কাজ খুঁজছেন, তার চেয়ে বেশি কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। ফলে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি। এই কাজের বাজার মার্কিন অর্থনীতিতে ভালোভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু এটাও সত্য, মানুষ এখন চাপ বোধ করছে।

এখন বড় কিছু ঘটলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে রীতিমতো ভূমিকম্প হতে পারে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মানুষের যত দিন কাজ আছে, তত দিন তাঁরা ব্যয় করে যাবেন। হঠাৎ মানুষের পক্ষে ব্যয় কমিয়ে দেওয়া বা আকাঙ্ক্ষিত জীবনমানের অবনমন করা কঠিন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ এখন ইচ্ছেমতো খরচ করছে না; বাছবিচার করছে; এমনকি প্রয়োজন হলে তারা খরচ কমিয়েও দিতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে ভোক্তারা অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন। অর্থনীতিবিদেরা এখন চোখকান খোলা রেখে পর্যবেক্ষণ করছেন, কখন বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয়।

এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোতে বেচাকেনা খুব একটা বাড়েনি; আগের মাসে যা ছিল, সে মাসেও তা–ই ছিল। যদিও অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস ছিল, বেচাকেনা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বাড়বে। এ ছাড়া মার্চ মাসের খুচরা বিক্রয়ের পরিসংখ্যান সংশোধন করে হ্রাস করা হয়েছে।

আরও দুঃসংবাদ হলো, গত সপ্তাহে প্রকাশিত জিডিপির সংশোধিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরের প্রথম তিন মাসে ভোক্তা ব্যয় প্রাথমিকভাবে যা দেখানো হয়েছিল, বাস্তবে তার চেয়ে কম হয়েছে।

প্রাথমিক হিসাবে দেখানো হয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভোগ ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু সংশোধিত প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ। এতে যেটা হয়েছে তা হলো, প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসাব ১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।

ফ্যাক্টসেট নামের এক সংস্থা অর্থনীতিবিদদের নিয়ে যে জরিপ করেছে, তার প্রতিবেদন আগামী শুক্রবার প্রকাশিত হবে। কিন্তু জানা গেছে, এপ্রিল মাসের ভোগ ব্যয় মার্চের তুলনায় অনেকটা কমেছে।

সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদটা এসেছে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে। এপ্রিল মাসে অর্থনীতিবিদেরা ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার প্রত্যাশা করলেও হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের। বেকারত্বের হারও কিছুটা বেড়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কর্মসংস্থানের এই ধারা কত দিন অব্যাহত থাকে, সেটাই দেখার বিষয়।

তবে কেবল এক মাসের উপাত্ত দিয়ে বোঝা যাবে না যে অর্থনীতির গতি আরও কমে যাবে নাকি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এক মাসের পরিসংখ্যান দিয়ে ধারা বোঝা যায় না।