ডোনাল্ড ট্রাম্প কত সম্পদের মালিক? তাঁর মালিকানায় কী কী রয়েছে
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আজ সোমবারের মধ্যে নিউইয়র্ক রাজ্যের একটি আদালতে ৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বন্ড জমা দিতে হবে। একটি দেওয়ানি মামলায় এই বন্ড দেওয়ার জন্য এর আগে আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন। ট্রাম্প তাঁর সম্পদের অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়েছেন বলে আদালতের বিচারক তাঁর আদেশে উল্লেখ করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন যে তাঁর পক্ষে ওই পরিমাণ অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়। শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। ট্রাম্প নিজেই ট্রুথ সোশ্যালের মালিক।
মার্কিন গণমাধ্যম এনপিআর জানায়, ট্রাম্পকে অবশ্য ওই পরিমাণ নগদ অর্থ আদালতে জমা দিতে হবে না। তবে তাঁকে এমন একটি কোম্পানি খুঁজে বের করতে হবে, যারা এই নিশ্চয়তা দেবে যে সাবেক প্রেসিডেন্ট তাঁর আপিলে হেরে গেলে তারা ৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করবে। এটাই হলো বন্ড।
তবে এমন একটি বন্ড জোগাড় করতে হলে সম্পদ দেখাতে হয়। ট্রাম্পের আইনজীবীরা গত সোমবার আদালতে জানিয়েছেন যে তাঁরা ৩০টি কোম্পানির কাছে এই বন্ড দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
কিন্তু বাস্তব কথা হলো, এমন একটি বন্ড জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। কারণ, এর জন্য প্রায় ১০০ কোটি ডলার নগদ থাকতে হবে, যা তাঁদের নেই।
রয়টার্স জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি বন্ড দিতে না পারেন, তাহলে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস সাবেক প্রেসিডেন্টের সম্পত্তি জব্দের পথে হাঁটতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্পের আইনজীবীরা রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেননি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং তাঁর আয়ের উৎসগুলো কী কী, সে বিষয়ে রয়টার্স একটি তালিকা তৈরি করেছে। আদালতে তিনি যে তথ্য দিয়েছেন এবং ফেডারেল আইনের আওতায় আর্থিক বিষয়ে যেসব তথ্য প্রকাশ করতে হয়, তার ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
তবে ট্রাম্প সম্পদের যে মূল্য দেখিয়েছেন, তার কোনো কোনোটি নিয়ে নিউইয়র্কের আদালতে ভিন্নমত পোষণ করা হয়েছে। তবে ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে আপিল করবেন বলে পরিকল্পনা করছেন।
নগদ অর্থ
শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প যে পোস্ট করেছেন, তাতে তিনি বলেছেন যে তাঁর কাছে প্রায় ৫০ কোটি ডলার নগদ রয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের কাছে দেওয়া এক জবানবন্দিতে ট্রাম্প বলেছিলেন যে তাঁর কাছে ৪০ কোটি ডলারের বেশি নগদ অর্থ রয়েছে।
তবে এর আগে ট্রাম্প যা দাবি করেছিলেন, এই অর্থের পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি। ২০২১ সালের ৩০ জুন তিনি নিজের যে আর্থিক পরিস্থিতি আদালতে জমা দিয়েছিলেন, তাতে তিনি বলেছিলেন যে সে সময় তাঁর হাতে ২৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা নগদ অর্থ সমতুল্য সম্পদ ছিল।
ফেডারেল সরকারের কাছে ২০২৩ সালের আগস্টে ট্রাম্প যে আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, তাতে দেখা গেছে যে তাঁর আয়ের নানা রকম উৎস রয়েছে।
ট্রাম্প ২০২২ সালে জানান, তিনি গলফ কোর্স ও হোটেল থেকে আয় করেছেন ৫৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, লাইসেন্স ফি ও রয়্যালটি থেকে ৩ কোটি ডলার, ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ ২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং বিভিন্ন ভবনের মালিকানা থেকে তাঁর প্রাপ্তি ৬ কোটি ১১ লাখ ডলার।
এর বাইরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তৃতা করে আয় করেন ৬২ লাখ ডলার। পাশাপাশি ওই বছর স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যান্ড আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টস থেকে পেনশন বাবদ ১ লাখ ১৬ হাজার ১০৩ ডলার আয় করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।
২০২২ সালে ট্রাম্প আরও জানিয়েছিলেন যে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত তাঁর হোটেল থেকে তিনি পেয়েছেন ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এই আয়ের মধ্যে ছিল হোটেলটি বিক্রি বাবদ লাভ। একই সঙ্গে দুটি হেলিকপ্টার বিক্রি করে তিনি পেয়েছিলেন ১০ লাখ ডলার।
সম্পত্তি
হোটেল, অফিস ভবন, আবাসিক ভবন, গলফ কোর্স ও জমির মালিক ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২১ সালের জুনে তাঁর আর্থিক বিবরণীতে তিনি দামি যেসব সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছিলেন, তার মধ্যে ছিল নিউইয়র্কের ৪০ ওয়াল স্ট্রিটে অবস্থিত একটি অফিস ভবন, ম্যানহাটানে অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ার ও ফ্লোরিডার পাম বিচের অবকাশযাপন কেন্দ্র মার-এ-লাগো।
ওই বিবরণীতে বলা হয়েছিল, ট্রাম্পের সম্পত্তির মূল্য ওই সময়ে ছিল ৪৩০ কোটি ডলার। আর তাঁর ঋণ ও অন্যান্য দায়ের আর্থিক মূল্য ছিল ৪৩ কোটি ৯২ লাখ ডলার। বলা হয়, তিনি মোট ৪৫০ কোটি ডলারের মালিক।
সম্পত্তির মধ্যে গলফ ক্লাব ও অন্যান্য ক্লাব অবকাঠামোর দাম দেখানো হয় ১৭৬ কোটি ডলার, নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ার ও ট্রাম্প প্লাজা ৫২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং আরও দুটি ভবনের আংশিক মালিকানা বাবদ তাঁর হিস্যা ৬৪ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।
তবে নিউইয়র্কের মামলায় আদালত বলেছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক বছর যাবৎ তাঁর সম্পত্তির মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে তিনি ৪০ ওয়াল স্ট্রিটের সম্পত্তির মূল্য ১২ কোটি ডলার বেশি দেখিয়েছেন, আর ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক রাজ্যের সেভেন স্প্রিং সম্পত্তির দাম বেশি দেখিয়েছেন ১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
মার-এ-লাগো অবকাশযাপন কেন্দ্রের জন্য ট্রাম্প যে মূল্য দেখিয়েছেন, বিচারক তাঁকে ‘প্রতারণামূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিচারক লিখেছেন, এ ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের তুলনায় ১০০ কোটি ডলার বা তার চেয়েও বেশি দাম দেখানো হয়েছে।
ট্রুথ সোশ্যাল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার। যে কোম্পানির সঙ্গে এটি একীভূত হয়েছে, তার শেয়ারের দামের ওপর ভিত্তি করে এই মূল্যমান ঠিক করা হয়। যৌথ এই কোম্পানিতে ট্রাম্পের শেয়ারের মূল্যমান এখন ৩৬০ কোটি ডলার। আর কোম্পানিতে তাঁর হিস্যা ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ এবং ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে।
তবে একত্রকরণের ছয় মাস পার না হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কোম্পানিতে তাঁর শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না কিংবা শেয়ারের বিপরীতে ঋণ নিতে পারবেন না।