ব্রাজিলের অর্থনীতি মন্দার কবলে
বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি ব্রাজিল অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক এপ্রিল-জুনে আগের তিন মাসের চেয়ে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির অর্থনীতি ১ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। বিশ্লেষকেরাও ব্রাজিলের অর্থনীতিতে সংকোচনের আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু সংকোচনের মাত্রাটা তাঁদের ধারণাকে ছাড়িয়ে গেছে।
এর আগে বছরের প্রথম প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে দেশটির অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। ওই প্রান্তিকে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ সংকোচনের ধারণা করা হয়েছিল।
কয়েকটি কারণে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে মন্দা ত্বরান্বিত হয়েছে। যেমন, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমার পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্থর গতি দেখা দেওয়ায় এবং স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম কমায় মন্দা ঘনীভূত হয়। এর ওপর সুদের হার বেড়ে যাওয়ারও একটা বড় ভূমিকা আছে। কারণ, দেশটিতে সুদের হার বেড়ে ইতিমধ্যে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশে উঠেছে, যা ভোক্তা ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে একদিকে বেকারত্ব ভাতাসহ সরকারি ব্যয় কমেছে, অন্যদিকে করের হার বেড়েছে।
কোনো দেশের অর্থনীতি পরপর দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হলে সেটাকে অর্থনৈতিক মন্দা বলা হয়।
এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্রাজিলে খানা ব্যয় আগের তিন মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। শিল্প খাতের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া পরিবহন, মজুত, ডাকসেবা, আর্থিক ও বিমা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। সার্বিকভাবে এক বছরে ব্রাজিলের অর্থনীতি ২ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
দেশটিতে বেকারত্বের হার সাড়ে ৭ শতাংশে উঠেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা সরকারি লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ। মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা রিয়েলের দাম এ বছরে ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ কমেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের কথা হলো, ব্রাজিলের অর্থনীতি আগামী ২০১৭ সালের আগে ঘুরে দাঁড়াবে না—এমন আশঙ্কাই করছেন বিশ্লেষকেরা। অস্টিন রেটিং নামক একটি সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স অ্যাগোস্টিনি মনে করেন, টানা দুই বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমলে ব্রাজিলের অর্থনীতি ৮৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় চলে যাবে।
সূত্র: বিবিসি ও এএফপি।