আন্তর্জাতিক বাজারে যে কারণে বাড়ছে সয়াবিন তেলের দাম
দেশের বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরেই অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধি।
বিশ্বব্যাংকের মাসিক পণ্য বাজার তালিকায় দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, গত বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭০০ মার্কিন ডলারের আশপাশেই। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে সয়াবিন তেলের দাম। এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ ডলার। আর গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৪৫০ ডলার।
করোনার মধ্যেও বিশ্বে সয়াবিন তেলের উৎপাদন বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে দামও। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উৎপাদক দেশগুলো রপ্তানি বাড়িয়েছে, সেই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে ওই দেশগুলোর মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ায় তেলের দাম বেড়েছে।
দেখা গেছে, করোনার মধ্যেও বিশ্বে সয়াবিন তেলের উৎপাদন বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে দামও। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উৎপাদক দেশগুলো রপ্তানি বাড়িয়েছে, সেই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে ওই দেশগুলোর মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ায় তেলের দাম বেড়েছে।
মার্কিন বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সবক্সের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকেই সয়াবিন থেকে তৈরি প্রাকৃতিক জ্বালানি বায়োডিজেলের উৎপাদন কমে গেছে। এতে বেড়ে গেছে সয়াবিন তেলের উৎপাদন।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে যেখানে বিশ্বব্যাপী ৫ কোটি ৮০ লাখ টন সয়াবিন তেল উৎপাদিত হয়, সেখানে ২০২০ সালে উৎপাদিত হয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ টন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতটা জোগান বাড়ার পরেও কেন দাম বাড়ল। ইনডেক্সবক্স তাদের গবেষণায় দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দায়ী করেছে উৎপাদক দেশগুলোকে। তারা রপ্তানিশুল্ক বাড়িয়েছে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল উৎপাদিত হয় চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে চীন ১ কোটি ৮০ লাখ টন ও যুক্তরাষ্ট্র ৮০ লাখ টন সয়াবিন তেল উৎপাদন করে, যা বিশ্বের মোট উৎপাদন প্রায় ৪৫ শতাংশ।
এখানে আরেকটি বিষয় আছে, তা হলো ডলারের বিপরীতে এই দেশগুলোর মুদ্রার মান বেড়ে গেছে। এ ছাড়া করোনার কারণে সয়াবিন তেলের উপজাত পণ্য সয়ামিলের (সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার) চাহিদা কমে যাওয়ায় বেড়ে গেছে সয়াবিন তেলের দর।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল উৎপাদিত হয় চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে চীন ১ কোটি ৮০ লাখ টন ও যুক্তরাষ্ট্র ৮০ লাখ টন সয়াবিন তেল উৎপাদন করে, যা বিশ্বের মোট উৎপাদন প্রায় ৪৫ শতাংশ।
এরপরই আছে ব্রাজিল। তবে তিন দেশেরই সয়াবিন তেলের অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনেক বেশি। চীনের সয়াবিন তেলের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও ১ কোটি ৮০ লাখ টনই। যার ফলে চীন থেকে রপ্তানি হচ্ছে না। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আরও ২০ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করে। আর ব্রাজিলের বার্ষিক চাহিদা ৮৭ লাখ টন। অর্থাৎ এই তিন দেশের চাহিদা বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ৬৩ শতাংশ।
সয়াবিন তেল রপ্তানিকারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা। দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৫৯ লাখ টন সয়াবিন তেল রপ্তানি করে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারের প্রায় অর্ধেকই আসে আর্জেন্টিনা থেকে। গত বছর আর্জেন্টিনার সয়াবিন তেল উৎপাদন বেড়েছে, তবে দেশটির মুদ্রা পেসো ক্রমেই ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে। ওদিকে আর্জেন্টিনা তাদের রপ্তানিশুল্কও বাড়িয়েছে। মূলত, এ কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সয়াবিন তেলের দাম।
উৎপাদক দেশগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বে উৎপাদিত সয়াবিন তেলের মাত্র ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বা ১ কোটি ২৬ লাখ টন তেল আসে আন্তর্জাতিক বাজারে। বিশ্বে সয়াবিন তেল আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে ভারত। এরপরই আছে আলজেরিয়ার।
দেশের ইতিহাসে সয়াবিন তেল এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বাজারে এখন প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা।
এর মধ্যে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতি লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ১৩ টাকা বৃদ্ধির অনুমতি চেয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানা গেছে।