দেশের জন্য ক্ষতিকর বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি বাতিল করতে হবে: আনু মুহাম্মদ
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বিদ্যমান বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলো বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিংবা দেশের জন্য আর্থিকভাবে বোঝা, সেগুলো বাতিল করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের চুক্তি বাতিল করার অনেক উদাহরণ রয়েছে। সুতরাং দেশেও এ ধরনের চুক্তি বাতিল করা সম্ভব।
আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। ত্রৈমাসিক জার্নাল সর্বজনকথা ও জার্মান-বাংলাদেশ ফোরামের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে সভাপ্রধান ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও সর্বজনকথার সম্পাদক আনু মুহাম্মদ। স্বাগত বক্তব্য দেন সুজিত চৌধুরি। সঞ্চালনা করেন বীথি ঘোষ।
সেমিনারে সকালের অংশে অর্থনীতি বিষয়ে চারটি অধিবেশন ছিল। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বরূপ ও করণীয়’ বিষয়ে লেখক ও প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা; ‘কৃষকের ন্যায্যমূল্য ও খাদ্যপণ্যের সিন্ডিকেট: রাষ্ট্রের করণীয়’ বিষয়ে কৃষি সাংবাদিক সাঈদ শাহীন; ‘বাংলাদেশের পাঁচ দশকে শিল্পায়নের ব্যর্থতা ও অনানুষ্ঠানিক খাতের বিকাশ’ বিষয়ে গবেষক ও লেখক মাহা মির্জা ও ‘অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ভূমিকা’ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে আনু মুহাম্মদ বলেন, ক্ষতিকর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাতিল করলে অনেকে দেশের ক্ষতি হবে বলতে পারেন, কিন্তু এসব কথার ভালো যুক্তি নেই।
আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল বা রূপপুরের মতো বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাতিল করলে যতটা আর্থিক ক্ষতি হবে, সেগুলো চালু রাখলে তার চেয়ে ক্ষতি আরও বেশি হবে। আর্থিক ও পরিবেশগত—দুই দিক থেকেই এ ক্ষতি হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের চুক্তি বাতিলের অনেক উদাহরণ আছে। শ্রীলঙ্কার উপকূলে ভারতীয় কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের উদাহরণ আছে। সুতরাং এটা করা সম্ভব।
অন্যদিকে ঋণ নিয়েও প্রশ্ন তোলা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মাদ। তিনি বলেন, কোনো দেশে কোনো সরকার যদি অনির্বাচিত হয়, জনধিক্কৃত হয় এবং তাদের নেওয়া কোনো প্রকল্প যদি জনগণের সম্মতির বিরুদ্ধে হয়, জনগণের প্রতিবাদ যদি থাকে ওই প্রকল্প ঘিরে, তাহলে ওই প্রকল্পের ঋণ ও চুক্তির দায়দায়িত্ব অস্বীকার করার অধিকার ও ক্ষমতা সেই দেশের জনগণের আছে।
এ সময় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যে পরিমাণে প্রতিবাদ হয়েছে, সেগুলো তো সব ভালোভাবে নথিবদ্ধ আছে। এটা নিয়ে আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও চিঠি লিখেছি। সুতরাং এটা প্রমাণিত, ওই প্রকল্প জনগণ গ্রহণ করেনি। সুতরাং এ ধরনের প্রকল্প বা চুক্তি বাতিল করার যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে এবং আমরা তা বাতিল করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি।
সম্প্রতি বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট আরোপের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়, তার ওপর শুল্ক নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য যেটা ক্ষতিকর, তার ওপর শুল্ক নেই। সরকারি কর্মচারীদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং নির্বিচার পদোন্নতির জন্য যে খরচ, তার জন্য সরকারের কাছে টাকা আছে। কিন্তু বাজেটঘাটতি বিবেচনায় জনগণের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত বলা যায় না।