চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাছ, আনার, কমলা ও টমেটো আমদানি কমেছে। তবে কাশ্মীরি আপেলের আমদানি দেড় গুণের বেশি বেড়েছে।
আমদানিকারকেরা বলছেন, ট্রাকে পণ্যের পরিমাণ নিরূপণ ও শুল্ক আদায়সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন নীতিমালা এবং মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। আমদানি করা মাছ, টমেটো, আনার, কমলা প্রভৃতি পণ্যের দাম ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে আবার মাছ ও আনারের মতো উপকারী পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ভারত থেকে এই বন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টন মাছ, ৭ হাজার ৮১ টন আনার, ২৪ হাজার ৮৪১ টন টমেটো ও ১০ হাজার ২০৩ টন কমলা লেবু আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে মাছ ১৭ হাজার ৩৯ টন, আনার ১৭ হাজার ৩৯৮, টমেটো ৪৬ হাজার ৩৮২ ও কমলা লেবু ১৩ হাজার ৭২২ টন আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে যেখানে ৯ হাজার ৯৯৮ টন আপেল আমদানি হয়েছিল, সেখানে এবার একই সময়ে এসেছে ১৫ হাজার ৬৬৫ টন।
আমদানি কমার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্কহার-সংক্রান্ত নতুন নীতিমালাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। গত ২৩ জুন এনবিআর নতুন শুল্ক নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, ছয় চাকার ট্রাকে ন্যূনতম ১৮ মেট্রিক টন কমলা/মাল্টা, ২৩ টন আনার, ২১ টন আপেল, ১৮ টন টমেটো, বরফসহ ৬ টন মাছ আমদানি করতে হবে। প্রতি ট্রাকে এর চেয়ে কম পরিমাণে আমদানি করলেও ওই পরিমাণের মতো শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
পচনশীল পণ্য আমদানিকারক গাজী এক্সিমের স্বত্বাধিকারী গাজী শামীম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ছয় চাকার ট্রাকে পচনশীল পণ্য, বিশেষ করে আনার, কমলা ও টমেটো ১০ থেকে ১১ টনের বেশি আনা যায় না। সেখানে এনবিআর এই পরিমাণ ১৮ থেকে ২৩ টন পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে নতুন শুল্ক নীতিমালায়। ফলে আমাদের বাধ্য হয়ে ট্রাকের কাঠামো বড় করতে হয়েছে। কিন্তু ছোট আমদানিকারকেরা আমদানি করতে পারছেন না।’
শামীম উদ্দীন আরও বলেন, ‘ট্রাকে পণ্যের ন্যূনতম পরিমাণ ও শুল্কহারের নতুন নীতিমালা বাতিলের বিষয়ে কাস্টমস কমিশনার ও এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো কাজ হয়নি। এ জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা মিলে ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু এটা তো পলিসিসংক্রান্ত বিষয়, যা এনবিআরের এখতিয়ারে। আমরা এনবিআরের নীতিমালা অনুযায়ী শুল্কায়ন করি। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।’
অন্যদিকে এক বছর ধরে দেশে মার্কিন ডলারের দাম ১০২ বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে। যে কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেশি পড়ছে। এতে খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে। ফলে আনার, আপেল, কমলা প্রভৃতি জনপ্রিয় ফলের দাম ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে ফলগুলোর চাহিদাও কমছে। তাতে আবার আমদানি কমছে।
এদিকে ছোট আকারের কাশ্মীরি আপেলের আমদানি বেড়েছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আপেলের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এ বছর এটি বেশি আমদানি হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাছ আমদানি কমেছে সাত হাজার টন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ মাসের তথ্য দিয়ে গোটা বছরের চিত্র বোঝা কঠিন। তবে দেশে উৎপাদন বাড়লে আমদানির চাহিদা কমে যায়। তবে তিনি এ কথাও বলেন, উৎপাদন যেমন বাড়তে পারে, তেমনি ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতাও কমতে পারে।
এনবিআরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে সব মিলিয়ে ৩৮ ধরনের ফল আমদানি হয়। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই হলো আপেল, মাল্টা, কমলা, আঙুর ও আনার। বাকি ৫ শতাংশ ফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো নাসপাতি, কিনুই, কতবেল, অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান, কিউই ইত্যাদি।
এনবিআরের হিসাবে, সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি ফল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার টন বা প্রায় ৬০ কোটি কেজি, যা এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ১০ হাজার টন কম। ফলভেদে খুচরা গড় মূল্য হিসাবে এসব ফল কিনতে ক্রেতাদের ন্যূনতম ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।